Thursday, 18 September 2014















সময়টা ধরা যাক ৭০০ খিস্টাব্দের কাছাকাছি।  সেই সময় থেকে পরের ৮০০ বছরের ভিতর দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া এর পরিবর্তনের ইতিহাস টাই এই গল্প। ইতিহাস বলতে গেলেই বলতেই হবে হিন্দু সভ্যতার একটা  নিদারুণ দুর্বলতার কথা।  লিখিত ইতিহাসের অভাব।  এই লেখা জিনিস টা হিন্দু দের একে বারেই ছিল না।  বেদ, উপনিসদ থেকে প্রায় সব  কিছুই স্মৃতি।  লেখা র ব্যাপক প্রচার শুরু হলো ইসলাম থেকে।  চীন এর লেখা র চল ছিল।  এমনকি প্রথম ১০০০ বছরের ইতিহাস এর মূল উপাদান এসেছে হিউএন সেং আর সেই রকম চীনা পর্যটনকারী দের  লেখা। 


এই সময় এর উপাদান তাই বেশ কম।  


৭০০ খিস্টাব্দের কাছাকাছি - ভারতএ তখন বিশাল পাল সাম্রাজ্য, পশিম এ দিল্লি থেকে পূর্বে বাংলা পর্যন্ত পাল দের রাজ্যত্ব। রাষ্ট্রকুট দের বিশাল রাজ্যত্ব পশিমে। দক্ষিণ ভারতের  দখল রয়েছে প্রধাণত ৩ দলের হাতে  - চোলারা তামিল রাজ্যত্ব চালাচ্ছেন, পল্লব রা আজকের অন্দ্রপ্রদেশ দখল রেখেছেন, পান্দিয়াস এর দখলে ভারতের শেষ দক্ষিণ প্রান্ত।  ধর্ম বলতে প্রধান দুটি - হিন্দু, বৌদ্ধধর্ম।জৈন ধর্ম ও ছিল, আজকের মতই কিন্তু রমরমা বলতে এই দুটির। তার ভিতর বৌদ্ধধর্ম ছিল প্রধাণ। ইলোরার বৌদ্ধ গুহা গুলো তৈরী হয়েছিল ৫০০ থেকে ৭০০ খিস্টাব্দের মধ্যে। কিন্তু কি ঘটল যে তার পরে আর ভারতে বড় বৌদ্ধ স্থাপত্যের এত অভাব ?


৮০০ খিস্টাব্দের শুরু র দিকের একটা সময়। ভারতের রাজনৈতিক মানচিত্র যে বড় পাল্টে গেল তা নয়।  পাল্টে গেল ধর্মের মানচিত্র।  আদি শংকর এর জন্ম আজকের কেরালা এর কাছাকাছি কথাও।  শংকর জীবিত ছিলেন মোটে ৩২ বছর।  কিন্তু তার ভিতর চিরকালের মতো ভারতবর্ষ পাল্টে দিলেন - একের পরে এক বৌদ্ধ পন্ডিত এর সাথে তর্কে জিতে হিন্দু ধর্ম কে ভারতে পুনরায় স্থাপন করলেন।  শংকর এর  নতুন হিন্দুত্ব্ হিন্দু এবং বৌদ্ধ এর মিলিয়ে তৈরী এক নতুন বাখ্যা।  যাক, শংকর এর পরে বৌদ্ধ পন্ডিত রা খুঁজে বেড়াতে লাগলেন নতুন জায়গা।  নজরে পড়ল ভারত এর পূর্ব প্রান্ত।  আজকের বার্মা, কাম্বোডিয়া , থাইল্যান্ড। বৌদ্ধ ধর্ম  ছড়িয়ে পড়ল এই  দেশে। 


৯০০ খিস্টাব্দের কাছাকাছি এসে দেখলাম পল্লব রা ক্ষমতা থেকে চলে গেলেন, চোলা দের ক্ষমতা বাড়তে থাকলো। নাগাপত্তিনাম , চোল সাম্রাজ্য এর একটি বিখ্যাত সমুদ্র বন্দর , বর্তমানে তামিলনাড়ু, এর একটি জেলা। মধ্যযুগীয় সময়কাল থেকে এই বন্দর নগরী বাণিজ্যিকভাবে ও সাংস্কৃতিকভাবে , রাজনৈতিকভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।  পর পর দুজন শক্তিশালী চোল রাজা এলেন, রাজরাজ চোল (985-1014 ) এবং পুত্র রাজেন্দ্র চোল (1012-1018 খ্রিষ্টাব্দ) ।


এই রাজেন্দ্র চোল এর সময় চোল রাজারা জয় করলেন,  কেদাহ। আজকের লংকাওই। লংকাওই এর বিচ রিসোর্ট এর প্যাকেজ টুর চারিদিকে। কেদাহ এই জয় ওই সমুদ্র পথ টার দখল তুলে দিল চোল দের হাতে। আর একটা জিনিস ও ঘটল -  ইন্দোনেশিয়া এর শ্রী বিজয়ন সাম্রাজ্য আসতে আসতে দূর্বল হতে থাকলো । কেদাহ থেকে শ্রী বিজয়ন এর দুরত্ব টা বড় কথা নয়।  আসল গুরুত্ব জাহাজ এর ট্রেড লেন হাতের বাইরে চলে গেল। 


এই কথা বলতে বলতে শ্রী বিজয়ন এর কথা চলেই এলো। আজকের ইন্দোনেশিয়া এর জায়গাতেই ছিল শ্রী বিজয়ন সাম্রাজ্য। বাঙালি পাঠক কে একটু ভূগোল মনে করিয়ে দিতে হবে - বালি বেড়াবার কথা অনেকই ভাবেন। বালি ইন্দোনেশিয়া এর একটা দ্বীপ। প্রায় বেশ কিছু হাজার দ্বীপ নিয়ে ইন্দোনেশিয়া আজকের সব থেকে বড় মুসলিম দেশ। ইন্দোনেশিয়া কে সহজে বোঝানোর জন্য বলি ৩ তে ভাগ - সুমাত্রা, জাভা, বালি। প্রায় ১৪০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়া তে ভারতের ছাপ সর্বত্র। ভারতের  লোক এসে ইন্দোনেশিয়া দখল করেছিল এই ধারণা  অনেকেরই।  সেটা ঠিক না।  প্রায় ৫০০০০ বছর ধরে মানুষ বসবাস করছে এই ইন্দোনেশিয়া ত়ে। অতি প্রাচীন এক সভত্যা। সমুদ্র পথে ভারত থেকে লোককের চলা চল ছিল, বাবস্যা বানির্জ্য ছিল। সেই থেকে ভারতের প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছিল। শ্রী বিজয়ন নাম টা কি করে চালু হলো সেটা বলতে পারছি না ।  


শেষ কথা - ইতিহাস না  জানা যেন যেমন ঠিক না, ইতিহাস নতুন করে তৈরী করাও যায়। আজকের সাউথ ইস্ট এশিয়া র সামনে সুযোগ এক নতুন  ইতিহাস তৈরী করার।   



No comments:

Post a Comment