Friday, 12 September 2014

দূর্গা পূজার শুরু আর আজকের কথা

বাংলাতে মুসলমান - ইংরাজ দের লড়াই আর দূর্গা পূজার একটা অন্যর সাথে জড়িয়ে।  ১৭৫৭ এ পলাশী  এর লড়াই  এর পরে কিছু লোক আচমকা বড়লোক  হয়ে গেল।  রাজা নবকৃষ্ণ দেব তেমন একজন।  সিরাজ এর লুকিয়ে রাখা কোষাগার লুট করে নবকৃষ্ণ রাতা রাতি এমন টাকা করলেন যে নানা ছড়া তৈরী হয়ে গেল।  সভা বাজার  হয়ে গেল শোভা বাজার। 
নতুন হাতে আসা টাকা নিয়ে নবকৃষ্ণ কি করবে বুঝতে পারছিলেন না। আজ কের সুদীপ্ত সেন এর হাল।  তা ছাড়া তখন টাকা লাগবেই বা কোথায়! তেমন ব্যবসা নেই।  আজকের মতো স্টক মার্কেট নেই।  Swiss একাউন্ট এ পাঠানো যাবে না। হাতে টাকা নিয়ে করবার কিছু না পেয়ে নবকৃষ্ণ লাগিয়ে দিলেন দূর্গা পুজোতে ।  আজকেও তো লোকে পইসা খরচা করে মেয়ের বিয়ে দিয়ে তাক লাগিয়ে দেয়।  নবকৃষ্ণ এর ইচ্ছা ছিল হিন্দু সমাজে অধিপতি হবার।  সেটা হলেন।  
সাহেব দের মুন্সী ছিলেন নবকৃষ্ণ।  নাম হয়ে গেল নপে মুন্সী। ইংরেজ রা দিল দিওয়ান উপাধী।  এখনো শোভাবাজার ঠাকুর বাড়ির বাইরের ফলক এ লেখা রয়েছে রাজা নবকৃষ্ণ দিওয়ান।  কবে মুছে যাবে পারলে গিয়ে দেখে এসো :-) 

শোভা বাজার রাজবাড়ির আজকের যারা আছেন তারা একটা ওয়েব সাইট বানিয়েছেন।  পূজো তা কে হেরিটেজ পুজো হিসাবে মারকেটিং করছেন।  না করলে বাড়ি আর তার সাথে জড়ানো ইতিহাস হারিয়ে যাবে। 

http://www.sovabazarrajbari.com/
ফ্যামিলি ট্রি পাবে এই ওয়েব সাইট এ।  

তবে বড় আকারের দূর্গা পুজোর ইতিহাস আরো আগের থেকে। 

লক্ষ্মীকান্ত রায়চৌধুরী দূর্গা পুজো আরো আগে, ১৬০০ শালের কাছাকাছি হালিশহর এ করতেন।  এই ভদ্রলোক ই হলেন কলকাতার সাবর্ণ চৌধুরী দের আদি পুরুষ। শুনেছি সেই হালিশহর  এর বাড়িতে এখনো পুজো হচ্ছে।  সাবর্ণ নাম এ একটু caste এর ছোয়া রয়েছে। তা হলেও সাবর্ণ ফ্যামিলি র ইতিহাস ছাড়া কলকাতার দূর্গা পুজো র ইতিহাস বলা যাবে না।  সাবর্ণ ফ্যামিলি এর উপরে কলেজ স্ট্রিট এ গেলেই বই কিনতে পারা যাবে। পুরনো দোকানে।  


ফিরে যাচ্ছি নবকৃষ্ণ তে।  নিজের ছেলে হলো না বলে দাদার ছেলে কে দত্তক নেন।  তার প্রায় ২০ বছর পরে হলো নিজের ছেলে।  ইন্টারনেট দিয়ে বুঝতে পারলাম না এত দেরী করে নিজের ছেলে হলো কি করে।  তবে মহাভারত এর দেশ এ নিয়োগ প্রথা  তে ছেলে হলে অবাক হবার কিছু নেই।  নবকৃষ্ণ ছেলে দত্তক নেবার সময় বা 'নিজের' ছেলে হবার সময় দুবার-ই বেশ ধুম ধাম করে পুজো দিয়েছেন। আর প্রথম বারের চমক পুজো দেব ফ্যামিলি তে হয়েছিল ১৭৫৭ এই।  নদিয়া তে কৃষ্ণচন্দ্র বিশাল বড় দূর্গা পুজো করলেন ওই বছরেই।  তবে নবকৃষ্ণ এর পুজো এর প্রধান আকর্ষণ হলেন  
ক্ল।ইভ ।  মেম  বাইজী , দেশী বাইজী।  সাথে ওয়াইন।  ভাবাই যাই না।   সেদিনের হিসাবে ১ লক্ষ টাকা  খরচ।  ৪ পার্সেন্ট inflation ধরে নিজেই হিসাব করলাম। ২৩৮ কোটি হলো।  সিরাজ এর থেকে লুঠ  হয়েছে ৮ কোটি টাকা। এই বার সেই হিসাব ধরে চললে মাথা ঘুরে যাবে।  এর থেকে যদি ধরি নবকৃষ্ণ ৫০ লক্ষ পেয়েছে তা হলেও মাথা বন্ বন করবে। সেটাও হবে আজকের হিসাবে ১ লক্ষ কোটি  টাকার মত।  সাহেব দের না ডাকলে পুজোর কোনো মানেই নেই। তাই সাহেব দের ডাকা হত , সাহেব রা সব থেকে ভালো সিট এ বসতেন। সাহেব দের invite লেটার এর নাম ছিল টিকিট। কে কত টিকিট দিতে পারল তার উপরে মর্যাদা নির্ভর করতো। চমকানোর বাপার নেই , ফেইসবুক এর যুগে। পাবলিক ফেইসবুক এ লাইক না পেলে বা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট না পেলে পাগল হয়ে যায়। এই বার বুঝতে অসুবিধা হবে না আচমকা সিরাজ চলে যাবার পর বড় বড় পারিবারিক দূর্গা পূজা কি করে শুরু হলো।  
১. ১৭৫৭ এর আগে মুসুলমান শাসনে , হিন্দু রা এত বড় আকারে পুজো করতে পারত না 
২. যেই পলাশীর লড়াই শেষ হয়ে গেল, বোঝা গেল কে এই বার হবে আসল রাজা - ইংরাজ 
৩.  শুরু হয়ে গেল ইংরাজ দের তেল মারা 
৪. হাতে পইসা এসে গেল সিরাজ এর ভান্ডার থেকে, নতুন ট্যাক্স রেভিনিউ হাতে এসে গেল  - চমকে যাবার কারণ নেই আর কিছু দিন পরেই আসবে মন্বন্তর।  ৭৬ এর মন্বন্তর।  ৭৬ মন্বন্তর আর দূর্গা পুজো এর barowari পুজো হবার একটা যোগ আছে। 

বাইজী , gymnast এরা কিন্তু শুধু দেশী রাই না।  ছিল সাহেব রাও।  গরিব সাহেব রা খেলা দেখাত। আচমকা নবাব , ইউরোপিয়ান , বাঙ্গালী জিন মিশে মেয়ে দের দেখতে ভালো হয়ে  গেল :-) পুজো করবার লোক এর কম পড়ল না।  

২০১১ তে দিদি এলেন, বাম ফ্রন্ট চলে গেল - তা কিছু টা ধর সিরাজ। তা এই বেহালা , সাউথ এর ক্লাব এর দূর্গা পূজা  এর কর্তা , যারা আবার মন্ত্রী তারাই ধর আজকের নবকৃষ্ণ দেব রা। তাদের দরকার আজকের ইংরাজ দের তেল মারা।  হাতে তাদের পায়সা এসেছে। সব সময় ই হই।  এক শাসন চলে গিয়ে আর এক শাসন এলে, ক্ষমতার সাথে টাকাও আসে।  আজকের সাথে কিছু অমিল থাকলেও দূর্গা পুজোর রমরমা বাড়ার পিছনে সেই নবকৃষ্ণ আমল এর ট্রাডিশন যে আজো চলছে তাতে সন্দেহ নেই। 







No comments:

Post a Comment