সিঙ্গাপুর এর পূর্ব্ প্রান্তের সাগরের অপরের একটা জেটি তে দাড়িয়ে দাড়িয়ে প্লেন এর উড়ে যাওয়া দেখতে দেখতে মনে পড়ে গেল দমদম এর কথা। কলকাতার বিমানবন্দর মানেই দমদম। দমদম বিমানবন্দর এর প্রায় ১০০ বছর হতে চললো। মাঝের ১০০ বছরে একটা বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়ে গেল, দেশ দুটুকরো হয়ে গেল। ইন্টারনেট নামে এক আজব জগত খুলে গেল - এ যেন এক আজব হাজারদুয়ারী। হাজার হাজার দরজার ভিতর দিয়ে অতীত এর আলো এক অচেনাকে চেনার হাতছানি দিচ্ছে। এই লেখা সেই ফিরে দেখার চেস্টা। ইন্টারনেট এর একটা একটা দরজা খুলে দেখা ভিতরে কি লুকিয়ে আছে !
কাগজের পাতায়, বই এর মলাটের ভিতরে ভিতরে দমদম এর হারানোর দিন গুলো একটা করে উঠে আসুক। তাই এটা শুধুই ওড়ার ইতিহাস না - যুদ্ধের ইতিহাস, মানুষ এর না খেতে পাওয়ারও ইতিহাস। আচমকা একটা দরজা খুলে দেখি, কবিগুরু দাড়িয়ে আছেন !!! এই বিমানবন্দরের গল্পতে উনিও এসে গেলেন। চমকে গেলাম পাশের ঘর থেকে কান্নার আওয়াজ পেয়ে - দমদম এর অতীত এর সাথে জড়িত আছে দুর্ঘটনার ইতিহাস। আছে কলকাতার জাপানি আক্রমণ এর কাহিনী ও।
পুরনো কাগজের পাতা উল্টাতে উল্টাতে ফিরে যাওয়া যাক ভুলে যাওয়া এক ইতিহাস এর দিকে - সেই ইতিহাস কলকাতার আকাশ এর বিমান চলাচলের ইতিহাস। বিমান চলার এই ইতিহাস শুধু কলকাতার আকাশে র দিকে তাকিয়ে লেখা - তাই দমদম এয়ারপোর্ট ই এই লেখার নায়ক। বাকি গল্পের মত এতেও অন্য বর্ণময় চরিত্র আছে। কখনো যেন তারাই নায়ক। দমদম এয়ারপোর্ট এর ইতিহাস এর শুরু ১৯২০ এর দশক থেকে।
একদম গোড়ার দিকের গল্প
তখন অবশ্য সারা পৃথিবীতেই বিমান চলাচলের প্রথম যুগ । দমদম এ ১৯২০ এর দশক থেকে প্লেন ওঠা নামা শুরু হয়ে গিয়েছিল । অবশ্য দমদম পাকা পাকি বিমানবন্দর হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে আরো পরে। প্রথমের ১৯২০ এর দশকে দমদম ছিল প্রায় একটা মাঠ। সেই সময় রাডার দমদম এ এসেছিল বলে মনে হই না। আকাশ থেকে দমদম এর এয়ার স্ট্রিপ দেখা বেশ কষ্টকর আর সেই অচেনা মাঠের ভিতর নামা টাও বিপদ্জন্নক ছিল। তাই কলকাতাতে নামতে আসা বিমান বেশির বেশিরভাগ বিমান দম দম এর বদলে ময়দানে নামার চেস্টা করতো। আকাশ থেকে ময়দান সহজে দেখাও যেত তাই ময়দানে নামা সহজও ছিল। নিচের ছবিটা ১৯২৫ সালের ময়দানে নামা
কাগজের পাতায়, বই এর মলাটের ভিতরে ভিতরে দমদম এর হারানোর দিন গুলো একটা করে উঠে আসুক। তাই এটা শুধুই ওড়ার ইতিহাস না - যুদ্ধের ইতিহাস, মানুষ এর না খেতে পাওয়ারও ইতিহাস। আচমকা একটা দরজা খুলে দেখি, কবিগুরু দাড়িয়ে আছেন !!! এই বিমানবন্দরের গল্পতে উনিও এসে গেলেন। চমকে গেলাম পাশের ঘর থেকে কান্নার আওয়াজ পেয়ে - দমদম এর অতীত এর সাথে জড়িত আছে দুর্ঘটনার ইতিহাস। আছে কলকাতার জাপানি আক্রমণ এর কাহিনী ও।
পুরনো কাগজের পাতা উল্টাতে উল্টাতে ফিরে যাওয়া যাক ভুলে যাওয়া এক ইতিহাস এর দিকে - সেই ইতিহাস কলকাতার আকাশ এর বিমান চলাচলের ইতিহাস। বিমান চলার এই ইতিহাস শুধু কলকাতার আকাশে র দিকে তাকিয়ে লেখা - তাই দমদম এয়ারপোর্ট ই এই লেখার নায়ক। বাকি গল্পের মত এতেও অন্য বর্ণময় চরিত্র আছে। কখনো যেন তারাই নায়ক। দমদম এয়ারপোর্ট এর ইতিহাস এর শুরু ১৯২০ এর দশক থেকে।
একদম গোড়ার দিকের গল্প
তখন অবশ্য সারা পৃথিবীতেই বিমান চলাচলের প্রথম যুগ । দমদম এ ১৯২০ এর দশক থেকে প্লেন ওঠা নামা শুরু হয়ে গিয়েছিল । অবশ্য দমদম পাকা পাকি বিমানবন্দর হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে আরো পরে। প্রথমের ১৯২০ এর দশকে দমদম ছিল প্রায় একটা মাঠ। সেই সময় রাডার দমদম এ এসেছিল বলে মনে হই না। আকাশ থেকে দমদম এর এয়ার স্ট্রিপ দেখা বেশ কষ্টকর আর সেই অচেনা মাঠের ভিতর নামা টাও বিপদ্জন্নক ছিল। তাই কলকাতাতে নামতে আসা বিমান বেশির বেশিরভাগ বিমান দম দম এর বদলে ময়দানে নামার চেস্টা করতো। আকাশ থেকে ময়দান সহজে দেখাও যেত তাই ময়দানে নামা সহজও ছিল। নিচের ছবিটা ১৯২৫ সালের ময়দানে নামা
সেই থেকে শুরু হলো কলকাতা তে বিমান চলাচলের ইতিহাস। এবার ১৯২৯ (?) এর ঘটনা। কলকাতার আকাশে প্লেন দেখা গেছে সেটাও একটা খবর।
ইম্পেরিয়াল এয়ারওয়েস (আজকের ব্রিটিশ এয়ারওয়েস) ১জুলাই ১৯৩৩ এ লন্ডন কলকাতা রুট সুরু করে দিল। রুট তা ছিল এই রকম - করাচি,যোধপুর,দিল্লি,কানপুর,এলাহাবাদ,কলকাতা। সেই বছরের ৯ ডিসেম্বর রুট চলে এলো সিঙ্গাপুর পর্যন্ত। তবে এই সব গুলি ছিল ডাক এর জন্য।
আমেলিয়া এআহার্ট
প্রথম মহিলা যিনি প্লেন এ বিশ্ব পরিক্রমাকরার করার চেস্টা করেন। দমদম এ নামার খবর চার দিকে প্রিন্ট হয়েছিল।দুর্ভাগ্য যে এর ১৬ দিন পরে ১৯৩৭, ২ জুলাই এ উনি অতলান্তিক এর আকাশ এ চিরকালের মত হারিয়ে গেলেন। উইকিপেডিয়া পড়লে হারিয়ে যাবার নানা তত্ত্বের বিবরণ মিলবে। একটা তত্ত্বের কথা উইকিপেডিয়া কম বলেছে - সেটা হলো জাপানী রা প্লেন তাকে গুলি করে নামিয়েছে। প্রমাণ নেই যদিও। ওয়ার্ল্ড ওয়ার এর আগের ঘটনা। তবুও নেতাজি এর হারিয়ে যাবার কথা মনে পরবেই। এর অনেক পরে এই সেদিন ১৯৯৭ সালে লিন্ডা ফ্লিন্চ কলকাতার উপর দিয়ে ওই একই রুট এ ওই একই প্লেন নিয়ে গেলেন।
হল্লা চলেছে যুদ্ধ এ -
২য় বিশ্বযুদ্ধ এর সময়। দমদম এর ইতিহাস আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এক নির্লিপ্ত যোগ। যুদ্ধ এর সময় দমদম এর গুরুত্ব খুব বেড়ে গিয়েছিল। তখন সুদুর প্রাচ্য এর লড়াই জোর কদমে চলছে। সিঙ্গাপুর জাপানীদের হাতে চলে গিয়েছে। জাপানী সৈন্য চলে এসেছে ভারতের পূর্ব সীমান্ত পর্যন্ত। পুরো ব্রিটিশ সাম্রাজ্য এর পূর্ব দিকের শেষ বড় শহর হলো কলকাতা। পূর্বদিকে মিলিটারি সাপ্লাই লাইন এর সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ দুটো কেন্দ্র ছিল কলকাতার বন্দর আর দমদম বিমানবন্দর ।
ডিসেম্বর ২৪ ১৯৪২ এ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এ বেরিয়েছিল জাপানি বম্বিং প্লেন এর কলকাতার আকাশে হানার কথা। মারা গিয়েছিল ২৫ জন। যদিও ভিতরের কাগজ এ দেখছি আলাদা করেবলা হয়েছে শুধু এক মহিলা আর ২ বাচ্চার মৃত্যু সংবাদ। বাকিদের উলেক্খ নেই কেন? হ্য়ত বাকি ক্ষতি ছিল মিলিটারি সৈনিকদের মৃত্যু। গোপনীয়তার কারণে সেই দিনের কাগজ ছাপায় নি বাকিদের কথা। সেই বছরেই জাপানিরা দখল করে নিয়েছে রেঙ্গুন আর আন্দামান। তাই কলকাতার উপরে বিমান আক্রমণ ছিল অশনি সংকেত শুধু ব্রিটিশ দের জন্যই না, সারা ভারত আর মিত্রপক্ষের জন্যও। ২৪ তারিখ এর সেই কাগজে রয়েছে মার্কিন বিমান হানার কথা - পাল্টা সেই হানা হয়েছিল রেঙ্গুন এ। সেই দিনেই জাপানি বিমান হানা হয়েছিল ফেনি আর চিটাগং এও। সেই হানা বোধ হয় তেমন কার্যকরি হয় নি। কোনো ক্ষতি হয় নি কাগজে জোর দিয়ে বেরিয়েছিল ।
২৬ ডিসেম্বর ১৯৪২ এর কাগজে রয়েছে বড়দিনের রাতের চতুর্থ জাপানি হামলার কথা। সেই দিনে লোক মারা যাবার কথা আর ছাপানো হয় নি। মিলিটারি সেন্সর বোধ হয়। তবে দাবি করা হয়েছে যে পাল্টা হানা তে একটা জাপানি বিমান ধ্বংস হয়েহে আর বাকি গুলোর ভালো ক্ষতি হয়েছে।
২৭ ডিসেম্বর ১৯৪২ এর কাগজে বের হলো নতুন নিয়ম এর কথা। বিকাল ৪ টে থেকে সকাল ৪ টে পর্যন্ত শতকার ক্রিয়ার সময় আলো জালানো বারণ হয়ে গেল। আলো দেখে জাপানি বিমান ফ্যাক্টরি ভেবে যদি আক্রমণ করে !!
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এ বাড়িয়েছিল তখন কার সেই দিনের আরো কিছু কথা। শিয়ালদহ, হাওড়া তে ভিড় উপচে পড়ছিল কলকাতা থেকে পালাবার জন্য। অবস্থা এমন হয়েছিল যে টিকিট বিক্রিতে কোটা করে দেয়াও হলো। ধ্বংস হওয়া জাপানি বিমান দেখানো হলো সবাই কে যাতে আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে, বা বলা ভালো মিত্রশক্তির ওপরে বিশ্বাস ফিরে আসে।
কলকাতার সেটা বড় বাজে সময়। যুদ্ধ এর আঁচ বাড়ছে, খাবার নেই, দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়ছে, অর্থনীতির হাল না বলাই ভালো। কিন্তু সেই দিনের কাগজের লেখা পড়লে মনেই হবে না অবস্থা এত খারাপ। পুরনো দিনের এই কাগজ দেখার সব থেকে বড় শিক্ষা বোধ হয় এটাই যে সত্যি কে প্রকট হতে দাও।
জাপানিরা কলকাতা তে আক্রমণ করেছিল কেন সেই নিয়ে লন্ডন থেকে পাবলিশ হওয়া দি এজ খবরের কাগজে বেশ বিস্তারিত আলোচনা বেরিয়েছিল। এজ এর মতে জাপানি রা প্রথমে আশা করেছিল সুভাস চন্দ্র বোস কে সামনে রেখে লড়লে এক সময় সারা ভারত ব্রিটিশ বাহিনীর বিরূদ্ধে চলে যাবে। সেটা ব্রিটিশ বাহিনীর সব থেকে বড় ক্ষতি - কারণ তখন লড়তে হবে একদিকে জাপানি দের বিরূদ্ধে অন্য দিকে ভারতীয় দের বিরূদ্ধেও। তার উপরে ভারতীয় সৈন্য হাত ছাড়া হবে ব্রিটিশ দের। এই তিন মুখী চাপের ফাসে ব্রিটিশরা পড়লে জাপানিদের লড়াই তাই অনেক সোজা হয়ে যাবে। সেই জন্য ১ বছর পর্যন্ত জাপানি রা ভারত এর ভূখন্ডে কোনো আক্রমন ও করে নি। জাপান ভারত কে প্রতিশ্রুতি ও দিয়েছিল যে কোনো আক্রমন হবে না। এক বছর পার হলেও যখন ভারত ব্রিটিশ সৈন্যর বিরুদ্ধে গেল না , তখন জাপানি রা কিছু টা হতাশা থেকেই আক্রমণ করে। আর একটা বাখ্যা হলো, আস্তে আস্তে যখন মার্কিন চাপ বাড়ছিল জাপানি পশ্চিম দিকের লাইন এর উপরে, জাপান কিছু টা বাধ্য হয়ে ব্রিটিশ-মার্কিন সাপ্লাই লাইন এ বিঘ্ন ঘটানোর জন্য এই কলকাতার উপরে বিমান হানা করে। এই জাপানি বিমান হানা বেশি দিন স্থায়ী হয় নি। মার্কিন বিমান বহর অনেক বেশি বড় আর আধুনিক ছিল জাপানি দের তুলনা তে। এই অসম লড়াই এর জন্য জাপানি আক্রমণ আস্তে আস্তে একসময় শেষ হয়ে গেল।
২য় বিশ্বযুদ্ধ এর সময় জাপানি প্লেন আক্রমণ এর ভয় ছিল। রেড রোড হয়ে গিয়েছিল কিছু দিনের রানওয়ে। সেই রেড রোড রানওয়ে যখন আবার সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হলো তখন সেই খবর কিন্তু পৃথিবীর অনেক নিউসপেপারই ছাপিয়েছিল। সত্যিই তো। এটা একটা স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসার খবর। যুদ্ধ এর সময় তার গুরুত্ব কম ছিল না।
এই বিমান চলাচলের মধ্যেই ঘটে যেত দুর্ঘটনা - সব থেকে আগের যে দুর্ঘটনা এর খবর পাচ্ছি সেটা ঘটেছিল ১৯৪৩ তে। একটা আর্মি ট্রান্স পোর্ট প্লেন দাড়িয়ে থাকা প্লেন এ ধাক্কা মারে।
আর একটা বছর পার করে ১৯৪৪ এ এলাম । ১৯৪৪ সালের কলকাতাতে (এই বার কিন্তু দমদম এই) নামা চীনের একটা বিমান এর ছবি।
জাপানি হানার ফলে দমদম এর গুরুত্ব আরো বেড়ে গেল। পাল্টা হানার মূল কেন্দ্র হলো দমদম। আমেরিকার বিখ্যাত ১২ এয়ার ফোর্স এর ঘাটি হলো খড়গপুর। আরো ৩-৪ নতুন এয়ার স্ট্রিপ খোলা হলো। মিলিটারি অভিযানে দমদম এর উপরে নির্ভরতা কমল। তবে যুদ্ধ ও তো শেষ হয়ে আসছিল।
উপরের ছবি - দেখাচ্ছে এই নতুন এয়ার স্ট্রিপ তৈরির কাজের গতি
যুদ্ধ শেষ হয়ে এলো
যুদ্ধ এক সময় শেষ হলো। যুদ্ধ শেষ হবার পরেও দমদম এর দরকার শেষ হোলো না । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধতে যদি ভালো কিছু হয়ে থাকে তা হলো বিমান ব্যবস্থার উন্নতি। বিশ্বযুদ্ধ শেষ এর পরেই জোয়ার এলো যাত্রীবাহী বিমান পরিবহণের। দমদম আস্তে আস্তে হয়ে উঠলো যাত্রীবাহী বিমান পরিবহণের গুরুত্ত্বপূর্ণ একটা বিমানবন্দর। প্যান এম, ব্রিটিশ এয়ার আরো কত আন্তর্জাতিক বিমান উড়ত তখন দমদম থেকে।
ইউরোপ আর পূর্ব এশিয়া এর ভিতর যোগাযোগ পথের ওপরে থাকার জন্য দমদমে প্লেন আসার বিরাম হয়নি। প্লেনকে তেল ভরতে আজকের থেকে অনেক বেশি। বিমানের গতিও ছিল কম। তা ছাড়া বিমান খুব বেশি উচু দিয়ে যেতে পারত না। তাই সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ব্যাংকক, অস্ট্রেলিয়া এই সব জায়গা থেকে ইউরোপ এ যেতে গেলে কলকাতাতে নামার দরকার হত। তা ছাড়া কলকাতা তখন ছিল ভারত এর প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র। মোটা টাকার টিকিট কেটে যাবার মতো লোক ছিল। পরে পরিস্থিতি পাল্টে গেল।
দমদমএ কিন্তু খুব মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রায় ভুলে গেছি আমরা এই দুর্ঘটনা গুলো। প্রথমে দেখে নেবো কি কি ঘটনা ঘটেছে দমদম কে নিয়ে - না ঘটনা বলা যাবে না দুর্ঘটনাই এই গুলো। এভিয়েশন সেফটি এর ওয়েব সাইট এ বিস্তারিত লিস্ট রয়েছে।
http://aviation-safety.net/database/airport/airport.php?id=CCU1#dep
কলকাতার সব থেকে বড় বিমান দুর্ঘটনা। সেটা ভুল। ৩ মে ১৯৫৩। আরো বড় দুর্ঘটনা।
৪৩ জন মারা গিয়েছিল সেই সিঙ্গাপুর -লন্ডন ফ্লাইট এ। এটাই যেহেতু সব থেকে বড় দুর্ঘটনা, আমার লেখার জিনিস ও একটু বেশি।
মাত্র ১০০০০ ফুট উপর দিয়ে যাচ্ছিল এই প্লেন টা। কালবৈশাখী তে শেষ। অবাক হতে হয় টেকনোলজি এর এগিয়ে চলা দেখে। এখন এই প্লেন গুলো ৪০০০০ ফুট এর উপর দিয়ে চলে। এই প্লেন টার যাবার কথা ছিল কলকাতা থেকে দিল্লি , তার পর লন্ডন। এটা B.O.A.C এর কমেট প্লেন। B.O.A.C পরে ব্রিটিশ এয়ারওয়েস এর সাথে এক হয়ে যাবে। এই রুট টা ছিল পৃথিবীর প্রথম একটা কমার্শিয়াল এয়ার রুট। কমেট এয়ার ক্রাফট ছিল পৃথিবীর প্রথম কমার্শিয়াল এয়ার ক্রাফট।
এর আগে সিঙ্গাপুর-লন্ডন ফ্লাইট ছিল ২ দিন আর ১২ ঘন্টার। এই নতুন কমেট এয়ার ক্রাফট সেই দূরত্ত কমিয়ে করেছিল মাত্র ৩৬ ঘন্টার। দূর প্রাচ্যের এটাই ছিল প্রথম B.O.A.C কমার্শিয়াল রুট।
তাই এই দূর্ঘটনা বেশ ঐতিহাসিক। প্রথমে ধরে নেওয়া হয়েছিল যে দূর্ঘটনা এর কারণ খারাপ আকাশ আর পাইলট এর ভুল। পরে, অনেক পরে ধরা পরে যে কমেট এর ডিজাইন এই ক্রুটি ছিল। দমদম এর দুর্ঘটনা কমেট প্লেন এর কফিন এর একটা পেরেক।
সেই দুর্ঘটনা টা বেরিয়েছিল অনেক গুলো কাগজে। দেশ, বিদেশ এর অনেক কাগজ এর প্রথম পাতার খবর ছিল। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ছাপিয়েছিল প্রথম পাতার প্রথম খবর হিসাবে।
না, ফ্লাইট টা তে কোনো মিত্র, ব্যানার্জী ,চ্যাটার্জী বা মুখার্জী ছিলেন না। কোনো ভারতীয় ছিলেন না সেই দিনের ফ্লাইট এ। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস কলকাতা থেকে কারা উঠেছিলেন তাদের তালিকা দিয়েছিল। তাতে দেখছি ১০ জনের নাম। সবই ইউরোপিয়ান নাম। বেশ বোঝা যায় স্বাধীনতার ৭ বছর পরেও কলকাতা তে ছিলেন অনেক ইউরোপিয়ান। এই কমার্শিয়াল রুট গুলো দমদম থেকে যে চলত হয়ত এই ইউরোপিয়ান দের জন্যই।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলছে যে প্লেন এর টুকরো মিলেছে প্রায় ৬২ মাইল জায়গা ধরে। প্রায় মুর্শিদাবাদ এর কাছে ও মিলেছে প্লেন এর ধ্বংস হবার চিহ্ন। বিকাল বেলাতে প্লেন ছেড়েছিল প্রায় ৪-৩০ নাগাদ। ২ ঘন্টা ২০ মিনিট লাগত দিল্লি যেতে।রাত ৯-৩০ পর্যন্ত দিল্লিতে প্লেন না আসাতে শেষ পর্যন্ত শুরু হলো খোঁজাখুজি।
সেই দিনের আনন্দবাজার দেখতে পেলে ভালো হত। ইংরাজি কাগজ গুলো খবর ছাপালেও ছবি কিছু দেয় নি। আনন্দবাজার, বসুমতি , যুগান্তর এর পাতা তে ছবি না থাকাটাই হবে অবাক হবার মতো।
প্রথম দিনের দুর্ঘটনা এর খবর কিন্তু পরের দিনেই চলে গেল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এর দ্বিতীয় পাতার একটা কোণে। পরের দিনের খবরে দেখা যাচ্ছে একটা তদন্ত দল তৈরী হচ্ছে। ব্রিটিশ নিউসপেপার কি বলছে তাও দিয়েছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
দা টেলিগ্রাফ বলছে দুর্ঘটনা হলেও কমেট চালিয়ে যাওয়া উচিত। কমেট মানুষের উন্নতির একটা চিহ্ন। বিমান দুর্ঘটনায় সিঙ্গাপুর স্টক এক্সচেঞ্জ এর ৪ জন মারা গিয়েছিলেন। তাঁদের স্মৃতিতে ৪ মে সিঙ্গাপুর স্টক এক্সচেঞ্জ ও অর্ধেক দিন বন্ধ ছিল।
পরের দিনের কাগজে বেরিয়েছিল একটা ১৪ বছরের ছেলের দুর্ঘটনা দেখার বিবরণ। খুব বৃষ্টি হচ্ছিলো, সেই সঙ্গে কালবৈশাখী এর প্রবল ঝড়। আচমকা একটা আগুনের গোলা নেমে এলো সবুজ আমবাগানের উপর দিয়ে। পড়ল গিয়ে কাদা মাখা মাঠের ভিতর। তখনও আজকের মতো উদ্ধার এর ব্যবস্থা থাকলে হয়তো কিছু লোকের প্রাণ রক্ষা হতো। গ্রামের মানুষ চেষ্টা করেছিল কাদা ছুড়ে ছুড়ে আগুন বন্ধ করার। তা কি আর হয় !! সেই দুর্ঘটনা তে দমকল এসেছিল প্রায় ২৪ ঘন্টা পরে। তখন সব কিছু জ্ব্বলে খাক।
তার পরের দিনের ৬ই মে এর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এ বাংলা খবর বলতে দুটো - কলকাতার অ্যাসেম্বলি তে মোশন পাশ হয়েছে বিহার এ অফিসিয়াল ভাষা এর ভিতরে বাংলা অন্তর্ভুক্তির দাবীতে ! দ্বিতীয় খবর হলো নেতাজীর ফেলে যাওয়া টাকা উধ্হার এর দাবীতে ! সত্যি নেতাজি আজাদ হিন্দ এর জন্য অনেক টাকা রেখে গিয়েছিলেন - কোথায় গেল সেই টাকা !! ফিরে আসা যাক দমদম এ।
কমেট এর সেই দুর্ঘটনার বিস্তারিত অনুসন্ধাণ হয়েছিল। ইন্টারনেট এ পাবো সেই রিপোর্টও। রিপোর্ট টা সুন্দর , সহজ ভাষায় লেখা, সুন্দর করে ভাগ ভাগ করে বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে।
http://lessonslearned.faa.gov/Comet1/G-ALYV_Report.pdf
রিপোর্ট এ বলছে সেই প্লেন এর প্রধাণ ধ্বংস।বশেষ মিলেছিল দমদম থেকে ২৪ কিলোমিটার দুরে একটা নালা তে। এ ছাড়াও সেই ৩১ পাতার বিস্তারিত রিপোর্ট এ রয়েছে ম্যাপ, যাত্রী দের নাম, প্লেন এর দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ। ম্যাপ দেখে মনে হচ্ছে আজকের সন্তোষপুর এর কাছে থেকেই প্লেন এর টুকরো পাওয়া গিয়েছিল। এই রিপোর্ট এ আরো মিলবে পাইলট এর এক্সপেরিয়েন্স রেকর্ড।
তবে দমদমে বিমান দুর্ঘটনা আরো আছে। ১৯৫১ সালের ২২ নভেম্বর। শীত পড়ছে। কলকাতা তে আজকের মত সেদিনও হত কুয়াশা। ১৭ জন যাত্রী নিয়ে পাইলট দমদম এ নামতে গিয়ে ভুল করে নামল মানিকতলাতে। মানিকতলা তখন গ্রাম। প্লেন গ্রামের মাঠে গিয়ে ধাক্কা খেল। একজন যাত্রী ছাড়া সবাই মারা গেল।
এর আগে সিঙ্গাপুর-লন্ডন ফ্লাইট ছিল ২ দিন আর ১২ ঘন্টার। এই নতুন কমেট এয়ার ক্রাফট সেই দূরত্ত কমিয়ে করেছিল মাত্র ৩৬ ঘন্টার। দূর প্রাচ্যের এটাই ছিল প্রথম B.O.A.C কমার্শিয়াল রুট।
তাই এই দূর্ঘটনা বেশ ঐতিহাসিক। প্রথমে ধরে নেওয়া হয়েছিল যে দূর্ঘটনা এর কারণ খারাপ আকাশ আর পাইলট এর ভুল। পরে, অনেক পরে ধরা পরে যে কমেট এর ডিজাইন এই ক্রুটি ছিল। দমদম এর দুর্ঘটনা কমেট প্লেন এর কফিন এর একটা পেরেক।
সেই দুর্ঘটনা টা বেরিয়েছিল অনেক গুলো কাগজে। দেশ, বিদেশ এর অনেক কাগজ এর প্রথম পাতার খবর ছিল। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ছাপিয়েছিল প্রথম পাতার প্রথম খবর হিসাবে।
না, ফ্লাইট টা তে কোনো মিত্র, ব্যানার্জী ,চ্যাটার্জী বা মুখার্জী ছিলেন না। কোনো ভারতীয় ছিলেন না সেই দিনের ফ্লাইট এ। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস কলকাতা থেকে কারা উঠেছিলেন তাদের তালিকা দিয়েছিল। তাতে দেখছি ১০ জনের নাম। সবই ইউরোপিয়ান নাম। বেশ বোঝা যায় স্বাধীনতার ৭ বছর পরেও কলকাতা তে ছিলেন অনেক ইউরোপিয়ান। এই কমার্শিয়াল রুট গুলো দমদম থেকে যে চলত হয়ত এই ইউরোপিয়ান দের জন্যই।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলছে যে প্লেন এর টুকরো মিলেছে প্রায় ৬২ মাইল জায়গা ধরে। প্রায় মুর্শিদাবাদ এর কাছে ও মিলেছে প্লেন এর ধ্বংস হবার চিহ্ন। বিকাল বেলাতে প্লেন ছেড়েছিল প্রায় ৪-৩০ নাগাদ। ২ ঘন্টা ২০ মিনিট লাগত দিল্লি যেতে।রাত ৯-৩০ পর্যন্ত দিল্লিতে প্লেন না আসাতে শেষ পর্যন্ত শুরু হলো খোঁজাখুজি।
সেই দিনের আনন্দবাজার দেখতে পেলে ভালো হত। ইংরাজি কাগজ গুলো খবর ছাপালেও ছবি কিছু দেয় নি। আনন্দবাজার, বসুমতি , যুগান্তর এর পাতা তে ছবি না থাকাটাই হবে অবাক হবার মতো।
প্রথম দিনের দুর্ঘটনা এর খবর কিন্তু পরের দিনেই চলে গেল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এর দ্বিতীয় পাতার একটা কোণে। পরের দিনের খবরে দেখা যাচ্ছে একটা তদন্ত দল তৈরী হচ্ছে। ব্রিটিশ নিউসপেপার কি বলছে তাও দিয়েছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
দা টেলিগ্রাফ বলছে দুর্ঘটনা হলেও কমেট চালিয়ে যাওয়া উচিত। কমেট মানুষের উন্নতির একটা চিহ্ন। বিমান দুর্ঘটনায় সিঙ্গাপুর স্টক এক্সচেঞ্জ এর ৪ জন মারা গিয়েছিলেন। তাঁদের স্মৃতিতে ৪ মে সিঙ্গাপুর স্টক এক্সচেঞ্জ ও অর্ধেক দিন বন্ধ ছিল।
পরের দিনের কাগজে বেরিয়েছিল একটা ১৪ বছরের ছেলের দুর্ঘটনা দেখার বিবরণ। খুব বৃষ্টি হচ্ছিলো, সেই সঙ্গে কালবৈশাখী এর প্রবল ঝড়। আচমকা একটা আগুনের গোলা নেমে এলো সবুজ আমবাগানের উপর দিয়ে। পড়ল গিয়ে কাদা মাখা মাঠের ভিতর। তখনও আজকের মতো উদ্ধার এর ব্যবস্থা থাকলে হয়তো কিছু লোকের প্রাণ রক্ষা হতো। গ্রামের মানুষ চেষ্টা করেছিল কাদা ছুড়ে ছুড়ে আগুন বন্ধ করার। তা কি আর হয় !! সেই দুর্ঘটনা তে দমকল এসেছিল প্রায় ২৪ ঘন্টা পরে। তখন সব কিছু জ্ব্বলে খাক।
তার পরের দিনের ৬ই মে এর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এ বাংলা খবর বলতে দুটো - কলকাতার অ্যাসেম্বলি তে মোশন পাশ হয়েছে বিহার এ অফিসিয়াল ভাষা এর ভিতরে বাংলা অন্তর্ভুক্তির দাবীতে ! দ্বিতীয় খবর হলো নেতাজীর ফেলে যাওয়া টাকা উধ্হার এর দাবীতে ! সত্যি নেতাজি আজাদ হিন্দ এর জন্য অনেক টাকা রেখে গিয়েছিলেন - কোথায় গেল সেই টাকা !! ফিরে আসা যাক দমদম এ।
কমেট এর সেই দুর্ঘটনার বিস্তারিত অনুসন্ধাণ হয়েছিল। ইন্টারনেট এ পাবো সেই রিপোর্টও। রিপোর্ট টা সুন্দর , সহজ ভাষায় লেখা, সুন্দর করে ভাগ ভাগ করে বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে।
http://lessonslearned.faa.gov/Comet1/G-ALYV_Report.pdf
রিপোর্ট এ বলছে সেই প্লেন এর প্রধাণ ধ্বংস।বশেষ মিলেছিল দমদম থেকে ২৪ কিলোমিটার দুরে একটা নালা তে। এ ছাড়াও সেই ৩১ পাতার বিস্তারিত রিপোর্ট এ রয়েছে ম্যাপ, যাত্রী দের নাম, প্লেন এর দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ। ম্যাপ দেখে মনে হচ্ছে আজকের সন্তোষপুর এর কাছে থেকেই প্লেন এর টুকরো পাওয়া গিয়েছিল। এই রিপোর্ট এ আরো মিলবে পাইলট এর এক্সপেরিয়েন্স রেকর্ড।
১৯৫১, ২২ নভেম্বর
এই সব ঘটনাগুলোই বিমান দুর্ঘটনা। একটা জিনিস সব কটা ঘটনা কে যোগ করে রেখেছে - সব গুলোই দমদম বিমানবন্দর বা দমদম এর চার পাশে ঘটা। এই লিস্ট এর কিছু কিছু নিয়েই আলোচনা করা যাক। তখনকার কাগজ কি কি বলেছে তা দেখি। আর সেই পুরনো কাগজ উল্টাতে উল্টাতে চলে যাবো হয়ত অন্য দিকে।
জুন ১২, ১৯৬৮। এই প্লেন তা আসছিল ব্যাংকক থেকে। এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার এর কথা ঠিক বুঝতে পারে নি। প্লেন দমদম এ নামার ঠিক আগে ধাক্কা মারে একটা গাছে।
হতে পারে কৈলাস এ কেলেঙ্কারী গল্পের শুরুতে যে প্লেন দুর্ঘটনা হয়েছিল সেটা এটার্ ওপরেই।
এর ২ বছর পরের ঘটনা। এই টা বোধ হই দমদম এর কাছে ঘটা শেষ দুর্ঘটনা। ভগবান এর দয়া তে এটাই যেন শেষ। রাশিয়ান প্লেন আসছিল ঢাকা থেকে। সাইক্লোন হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তান এ এর কিছু দিন আগেই। রাশিয়ান প্লেন সেই সাইক্লোন এর রিলিফ পৌঁছাতে গিয়েছিল। আগুন ধরে গিয়েছিল। এই প্লেন টা শেষ চেস্টা করেছিল পানাগড় এ নামার। দুর্ভাগ্য। শেষ রক্ষা হলো না। ১৭ জন যাত্রী বাঁচেন নি একজনও।
ডিসেম্বর ১৯, ১৯৭০
প্লেন দুর্ঘটনা এর এই শেষ। আর ২-৩ পয়েন্ট বলে শেষ করব।
দমদমের হাইজ্যেকের ইতিহাস
এমনকি হাইজ্যাক ও দেখেছে দমদম।
২ তো ঘটনার কথা পড়তে পারলাম।দুটি ঘটনায় আনন্দ সংবাদ। হাইজ্যাকরা এখানেই আত্মসমর্পণ করেছিল। যদিও এই হাইজ্যাকরা নিতান্ত নিরীহ , তবুও ইতিহাস বলবে দমদম এর কর্মীরা সামলেছেন ভালো ।
রবীন্দ্রনাথ ও দমদম
শুরুতেই তো বলেছিলাম একটা ঘরে কবিগুরু ও আছেন। এত ক্ষণ তো গেল নানা দুর্ঘটনার কথা দিয়ে। সেই সময় বিমান চড়ার অভিজ্ঞতা বোঝাতে গেলে আবার রবীন্দ্রনাথ এর ই কাছে যেতে হবে। গুরুদেব ১৯৩১ এ দমদম থেকে গেলেন ইরান এ। পারস্যর চিঠি তে সেই বিমান চড়ার যে অভিজ্ঞতা র ছবি ফুটে ওঠে তার এর থেকে ভালো বিবরণ আর কথাও দেখি নি। পারস্যর চিঠি র কিছু টা তুলে ধরা প্রাসঙ্গিক হবে। অসাধারণ ভাষা ছাড়াও খেয়াল করার জিনিস হলো রবীন্দ্রনাথ বেশ বিস্তারিত ভাবে লিখেছেন কি ভাবে হতো তখন কার বিমান যাত্রা গুলো।
রেলের পথ এবং পারস্য উপসাগর সেই গরমের সময় আমার উপযোগী হবে না বলে ওলন্দাজদের বায়ুপথের ডাকযোগে যাওয়াই স্থির হল। ....
পূর্বে আর-একবার এই পথের পরিচয় পেয়েছিলুম লণ্ডন থেকে প্যারিসে। কিন্তু সেখানে যে ধরাতল ছেড়ে উর্ধ্বে উঠেছিলুম তার সঙ্গে আমার বন্ধন ছিল আলগা। তার জল-স্থল আমাকে পিছুডাক দেয় না, তাই নোঙর তুলতে টানাটানি করতে হয় নি। এবারে বাংলাদেশের মাটির টান কাটিয়ে নিজেকে শূন্যে ভাসান দিলুম, হৃদয় সেটা অনুভব করলে।
কলকাতার বাহিরের পল্লীগ্রাম থেকে যখন বেরলুম তখন ভোরবেলা। তারাখচিত নিস্তব্ধ অন্ধকারের নীচে দিয়ে গঙ্গার স্রোত ছলছল করছে। বাগানের প্রাচীরের গায়ে সুপুরিগাছের ডাল দুলছে বাতাসে, লতাপাতা-ঝোপঝাপের বিমিশ্র নিশ্বাসে একটা শ্যামলতার গন্ধ আকাশে ঘনীভূত। .....
গলির মোড়ে নিষুপ্ত বারান্দায় খাটিয়া-পাতা পুলিস-থানার পাশ দিয়ে মোটর পৌঁছল বড়ো রাস্তায়। অমনি নতুন কালের কড়া গন্ধ মেলে ধুলো জেগে উঠল, গাড়ির পেট্রোল-বাষ্পের সঙ্গে তার সগোত্র আত্মীয়তা। ....
দমদমে উড়ো জাহাজের আড্ডা ঐ দেখা যায়। প্রকাণ্ড তার কোটর থেকে বিজলি বাতির আলো বিচ্ছুরিত। তখনো রয়েছে বৃহৎ মাঠজোড়া অন্ধকার। সেই প্রদোষের অষ্পষ্টতায় ছায়াশরীরীর মতো বন্ধুবান্ধব ও সংবাদপত্রের দূত জমে উঠতে লাগল। সময় হয়ে এল। ডানা ঘুরিয়ে, ধুলো উড়িয়ে, হাওয়া আলোড়িত করে ঘর্ঘর গর্জনে যন্ত্রপক্ষীরাজ তার গহ্বর থেকে বেরিয়ে পড়ল খোলা মাঠে। আমি, বউমা, অমিয় উপরে চড়ে বসলুম। ঢাকা রথ, দুই সারে তিনটে করে চামড়ার দোলা-ওয়ালা ছয়টি প্রশস্ত কেদারা, আর পায়ের কাছে আমাদের পথে-ব্যবহার্য সামগ্রীর হালকা বাক্স। পাশে কাঁচের জানলা।
ব্যোমতরী বাংলাদেশের উপর দিয়ে যতক্ষণ চলল ততক্ষণ ছিল মাটির কতকটা কাছাকাছি। পানাপুকুরের চারি ধারে সংসক্ত গ্রামগুলি ধূসর বিস্তীর্ণ মাঠের মাঝে মাঝে ছোটো ছোটো দ্বীপের মতো খণ্ড খণ্ড চোখে পড়ে। উপর থেকে তাদের ছায়াঘনিষ্ঠ শ্যামল মূর্তি দেখা যায় ছাড়া-ছাড়া, কিন্তু বেশ বুঝতে পারি আসন্ন গ্রীষ্মে সমস্ত তৃষাসন্তপ্ত দেশের রসনা আজ শুষ্ক। নির্মল নিরাময় জলগণ্ডুষের জন্য ইন্দ্রদেবের খেয়ালের উপর ছাড়া আর-কারো 'পরে এই বহু কোটি লোকের যথোচিত ভরসা নেই।
মানুষ পশু পাখি কিছু যে পৃথিবীতে আছে সে আর লক্ষ্য হয় না। শব্দ নেই, গতি নেই, প্রাণ নেই; যেন জীববিধাতার পরিত্যক্ত পৃথিবী তালি-দেওয়া চাদরে ঢাকা। যত উপরে উঠছে ততই পৃথিবীর রূপবৈচিত্র্য কতকগুলি আঁচড়ে এসে ঠেকল। বিস্মৃতনামা প্রাচীন সভ্যতার স্মৃতিলিপি যেন অজ্ঞাত অক্ষরে কোনো মৃতদেশের প্রান্তর জুড়ে খোদিত হয়ে পড়ে আছে; তার রেখা দেখা যায়, অর্থ বোঝা যায় না।
প্রায় দশটা। এলাহাবাদের কাছাকাছি এসে বায়ুযান নামবার মুখে ঝুঁকল। ডাইনের জানলা দিয়ে দেখি নীচে কিছুই নেই, শুধু অতল নীলিমা, বাঁ দিকে আড় হয়ে উপরে উঠে আসছে ভূমিতলটা। খেচর-রথ মাটিতে ঠেকল এসে; এখানে সে চলে লাফাতে লাফাতে, ধাক্কা খেতে খেতে; অপ্রসন্ন পৃথিবীর সম্মতি সে পায় না যেন।
শহর থেকে জায়গাটা দূরে। চার দিকে ধূ ধূ করছে। রৌদ্রতপ্ত বিরস পৃথিবী। নামবার ইচ্ছা হল না। কোম্পানির একজন ভারতীয় ও একজন ইংরেজ কর্মচারী আমার ফোটো তুলে নিলে। ......
এইখানে যন্ত্রটা পেট ভরে তৈল পান করে নিলে। আধঘন্টা থেমে আবার আকাশযাত্রা শুরু। এতক্ষণ পর্যন্ত রথের নাড়া তেমন অনুভব করি নি, ছিল কেবল তার পাখার দুঃসহ গর্জন। দুই কানে তুলো লাগিয়ে জানলা দিয়ে চেয়ে দেখছিলুম। সামনের কেদারায় ছিলেন একজন দিনেমার, ইনি ম্যানিলা দ্বীপে আখের খেতের তদারক করেন, এখন চলেছেন স্বদেশে।.... যাত্রীদের মধ্যে আলাপের সম্বন্ধ রইল না। যন্ত্রহুংকারের তুফানে কথাবার্তা যায় তলিয়ে। এক কোণে বেতারবার্তিক কানে ঠুলি লাগিয়ে কখনো কাজে কখনো ঘুমে কখনো পাঠে মগ্ন। বাকি তিনজন পালাক্রমে তরী-চালনায় নিযুক্ত, মাঝে মাঝে যাত্রার দফ্তর লেখা, কিছু-বা আহার, কিছু-বা তন্দ্রা। ক্ষুদ্র এক টুকরো সজনতা নীচের পৃথিবী থেকে ছিটকে পড়ে উড়ে চলেছে অসীম জনশূন্যতায়।
জাহাজ ক্রমে উর্ধ্বতর আকাশে চড়ছে, হাওয়া চঞ্চল, তরী টলোমলো। ক্রমে বেশ একটু শীত করে এল। নীচে পাথুরে পৃথিবী, রাজপুতানার কঠিন বন্ধুরতা শুষ্ক স্রোতঃপথের শীর্ণ রেখাজালে অঙ্কিত, যেন গেরুয়া-পরা বিধবাভূমির নির্জলা একাদশীর চেহারা।
অবশেষে অপরাহ্নে দূর থেকে দেখা গেল রুক্ষ মরুভূমির পাংশুল বক্ষে যোধপুর শহর। আর তারই প্রান্তরে যন্ত্রপাখির হাঁ-করা প্রকাণ্ড নীড়। নেমে দেখি এখানকার সচিব কুন্বার মহারাজ সিং সস্ত্রীক আমাদের অভ্যর্থনার জন্য উপস্থিত, তখনই নিয়ে যাবেন তাঁদের ওখানে চা-জলযোগের আমন্ত্রণে। শরীরের তখন প্রাণধারণের উপযুক্ত শক্তি কিছু ছিল, কিন্তু সামাজিকতার উপযোগী উদ্বৃত্ত ছিল না বললেই হয়। কষ্টে কর্তব্য সেরে হোটেলে এলুম।
হোটেলটি বায়ুতরীযাত্রীর জন্যে মহারাজের প্রতিষ্ঠিত। সন্ধ্যাবেলায় তিনি দেখা করতে এলেন। তাঁর সহজ সৌজন্য রাজোচিত। মহারাজ স্বয়ং উড়োজাহাজ-চালনায় সুদক্ষ। তার যতরকম দুঃসাহসী কৌশল আছে প্রায় সমস্তই তাঁর অভ্যস্ত!
পরের দিন ১২ই এপ্রেল ভোর রাত্রে জাহাজে উঠতে হল। হাওয়ার গতিক পূর্বদিনের চেয়ে ভালোই। অপেক্ষাকৃত সুস্থ শরীরে মধ্যাহ্নে করাচিতে পুরবাসীদের আদর-অভ্যর্থনার মধ্যে গিয়ে পৌঁছনো গেল। সেখানে বাঙালি গৃহলক্ষ্মীর সযত্নপক্ক অন্ন ভোগ করে আধ ঘন্টার মধ্যে জাহাজে উঠে পড়লুম।
সমুদ্রের ধার দিয়ে উড়ছে জাহাজ। ..... এইবার মরুদ্বার দিয়ে পারস্যে প্রবেশ। বুশেয়ার থেকে সেখানকার গবর্নর বেতারে দূরলিপিযোগে অভ্যর্থনা পাঠিয়েছেন। করাচি থেকে অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যোমতরী জাস্কে পৌঁছল। সমুদ্রতীরে মরুভূমিতে এই সামান্য গ্রামটি। কাদায় তৈরি গোটাকতক চৌকো চ্যাপটা-ছাদের ছোটো ছোটো বাড়ি ইতস্ততবিক্ষিপ্ত, যেন মাটির সিন্দুক।
রবীন্দ্রনাথ এর প্রথম বিমান চড়ার (১৬ এপ্রিল ১৯২১ লন্ডন থেকে পারি) অভিজ্ঞতা জানা যায় কবিগুরুর ১৭ই এপ্রিল ১৯২১ এর এক চিঠি থেকে
Dear friend, my short career in the sky was unobscured by cloud and luminous with the April sunshine.The only thing to which I could take objection was the deafening noise which followed me from shore to shore and made me glad to be back t the earth again where one has the choice of diluting all noise with silence as much as it is available.
১৯২১ এর সেই বিমান যাত্রা এর সাথে দম দম এর কোনো সম্পর্ক নেই। তবুও করিগুরু এর প্রথম বিমান যাত্রা এর সম্পর্কে আর একটা কথা বলে নি - সেই দিনের সেই যাত্রার সাথী ছিলেন গগনেন্দ্র নাথ। শিল্পী রবীন্দ্রনাথ কে বিমান এ দেখে যে কার্টুন একেছিলেন সেটা এই এই খানে দিলাম। রবীন্দ্রনাথ আকাশ এর তারার ভিতর, চেয়ার এ চেপে উড়ে চলেছেন, হাওয়া তে উড়ছে দাড়ি !!

শেষের কিছু কথা - হাজারদুয়ারীর আনাচে কানাচে
একদম শেষ করার আগে দিয়ে যাই কিছু দরকারী কথা। আরো পাতা উড়ে আসুক অতীত এর অন্ধকার থেকে - নতুন আলো পড়ুক দমদম এর রানওয়ে তে।ফ্লাইট গ্লোবাল ওয়েব সাইট এ দুর্দান্ত আর্কাইভ রয়েছে। কলকাতা দিয়ে সার্চ করলেই মিলবে ফ্লাইট ইন্টারন্যাশনাল এর পুরনো সংখ্যা। নানা খবর রয়েছে সেই সংখ্যা গুলোতে যার ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে - যেমন ধরুন এই নিচের খবর টা।
ল্যাঙ্কাশায়ার বিমান কর্পোরেশন কলকাতা তে একটা চার্টার ফ্লাইট চালাচ্ছেন। কোম্পানির জাহাজ কলকাতায় অসহায় ভাবে আটকে রয়েছে এবং কোম্পানীর দিনে 200 পাউন্ড করে ক্ষতি হচ্ছে। অপারেশন খুবই তাড়াতাড়ি করতে হবে। তাই দশ জনের একটা দল বিমানের সাথে যাচ্ছে যাতে ক্রমাগত উড়ন্ত সম্ভব হবে। বিমান চলবে ৩৭ ঘন্টা (ফ্লাইং টাইম ৩০-৩১ ঘন্টা).
http://www.flightglobal.com/pdfarchive/search.aspx?ArchiveSearchForm%24search=dumdum&ArchiveSearchForm%24fromYear=1941&ArchiveSearchForm%24toYear=1945&x=25&y=8
কলকাতা তে ব্রিটিশ এভিয়েশন ইন্সুরেন্স কোম্পানি এর অফিস ছিল। নিচের বিজ্ঞাপণ এ দেখা যাচ্ছে ব্রিটিশ রাজের কাছে তখনো কলকাতা ছিল দিল্লি বা অন্য জায়গার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

ডগলাস এয়ার ক্রুজার এর কলকাতা নামার সাধারণ ছবি রয়েছে ক্রিটিকাল পাস্ট ওয়েব সাইট এ
http://www.criticalpast.com/video/65675071961_Douglas-World-Cruiser_Indians_harbor-scene_cruiser-is-lifted

কলকাতার নামে ছিল প্লেন ও। দারুণ একটা ভিডিও রয়েছে ইউ টিউব এ।
শেষ করি ব্রিটিশ পাথে এর ১৯৪৯ এর একটা ভিডিও দিয়ে। নেহেরু এর কলকাতা আসার ছবি। প্রথম ১ মিনিট হলো দমদম এর ছবি।
No comments:
Post a Comment