Tuesday, 30 December 2014

দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া - মালাক্কার আগের কথা শ্রী বিজয়া

সময়টা ধরা যাক ৭০০ খিস্টাব্দের কাছাকাছি। সেই সময় থেকে পরের ৮০০ বছরের ভিতর দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া এর পরিবর্তনের ইতিহাস টাই এই গল্প। ইতিহাস বলতে গেলেই বলতেই হবে হিন্দু সভ্যতার একটা নিদারুণ দুর্বলতার কথা। লিখিত ইতিহাসের অভাব। এই লেখা জিনিস টা হিন্দু দের একে বারেই ছিল না। বেদ, উপনিসদ থেকে প্রায় সব কিছুই স্মৃতি। লেখা র ব্যাপক প্রচার শুরু হলো ইসলাম থেকে। চীন এর লেখা র চল ছিল। এমনকি প্রথম ১০০০ বছরের ইতিহাস এর মূল উপাদান এসেছে হিউএন সেং আর সেই রকম চীনা পর্যটনকারী দের লেখা।
এই সময় এর উপাদান তাই বেশ কম। এই ব্লগ টা প্রথমে লিখবো ভেবেছিলাম ৭০০ খিস্টাব্দের থেকে ১৪০০ খিস্টাব্দ পর্যন্ত। পরে মনে হলো কেন, শুধু শ্রী বিজয়া নিয়েই তো কিছু কথা লেখা যায়।

এই কথা বলতে বলতে শ্রী বিজয়া এর কথা চলেই এলো। আজকের ইন্দোনেশিয়া এর জায়গাতেই ছিল শ্রী বিজয়া সাম্রাজ্য। বাঙালি পাঠক কে একটু ভূগোল মনে করিয়ে দিতে হবে - বালি বেড়াবার কথা অনেকই ভাবেন। বালি ইন্দোনেশিয়া এর বড় দ্বীপ। প্রায় বেশ কিছু হাজার দ্বীপ নিয়ে ইন্দোনেশিয়া আজকের সব থেকে বড় মুসলিম দেশ। ইন্দোনেশিয়া কে সহজে বোঝানোর জন্য বলি ৩ তে ভাগ - সুমাত্রা, জাভা, বালি। প্রায় ১৪০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়া তে ভারতের ছাপ সর্বত্র। ভারতের লোক এসে ইন্দোনেশিয়া দখল করেছিল এই ধারণা অনেকেরই। সেটা ঠিক না। প্রায় ৫০০০০ বছর ধরে মানুষ বসবাস করছে এই ইন্দোনেশিয়া ত়ে। অতি প্রাচীন এক সভত্যা। সমুদ্র পথে ভারত থেকে লোককের চলা চল ছিল, বাবস্যা বানির্জ্য ছিল। সেই থেকে ভারতের প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছিল। শ্রী বিজয়া নাম টা কি করে চালু হলো সেটা বলতে পারছি না । শ্রী বিজয়া হয়তো কোনো একটা রাজ্য ছিলো না। অনেক তা আজকের ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এর মতো এক ধরনের নিয়ম এ চলা অনেক গুলো রাজ্য নিয়ে শ্রী বিজয়া।

এই সাউথ ইস্ট এশিয়া যেন একটা ফার্স্ট ব্রাকেট এর ভিতর - একদিকে ভারত, অন্য দিকে চীন। সেই দিনের মানচিত্র টা একটু কল্পনা করা যাক । মালেশিয়া তে গভীর জঙ্গল, হিমালয় শেষ হয়ে যাচ্ছে ভারতের পূর্ব সীমান্তে, চীন থেকে নেমে আসছে উপত্যকা কম্বডিয়া এর উপরে। চীন প্রথমে এই দিকে ব্যাবসা করত না। চীন ট্রেড লাইন ছিল ইউরোপ এর দিকে আর ভারত এর দিকে। কিন্তু ধীরে ধীরে ইউরোপ ট্রেড মুশকিল হয়ে যায়। মাটির উপরে তখন অনেক বিপদ, চোর ডাকাত এর ভয়। আরো কত কি !! তাই সুমুদ্র পথে শুরু হলো চীনা জাহাজ যাত্রা। ভারতের জাহাজ চির কাল ই দক্ষিণ পূর্ব দেশগুলো তে যেত। চীনা আর ভারতের সমুদ্র লড়াই এর কোনো ইতিহাস নেই। .. তখন ভারতের জাহাজ আন্দামান সুমুদ্র দিয়ে আস্ত ইন্দোনেশিয়া এর পশিম দিক পর্যন্ত, সুমাত্রা পর্যন্ত। তার পরে মাল স্থল পথে যেত। আজকের মালাক্কা, সিঙ্গাপুর স্ট্রেইটস এর ভিতর দিয়ে ভারতের জাহাজ যেত কিনা বলা মুশকিল। বোধ হয় যেত না - জলদসুর ভয়। এ ছাড়া ডিসেম্বর এর বৃষ্টির জন্য জাহাজ কে দাড়িয়ে থাকতে হত। তাই আস্তে আস্তে পুরো ইন্দোনেশিয়া আর মালয়েশিয়া এর পূর্ব আর পশিম দিকে অনেক বন্দর গড়ে উঠলো। পূর্ব দিকের বেশির ভাগ বন্দর এ আসত চীন এর জাহাজ। পশিম দিকের বন্দরের জাহাজ আস্ত ভারত থেকে। কিছু জাহাজ ছিল পূর্ব ভারতের - বাঙলা দেশ এর জাহাজ ও আসত। জাহাজ এলেই সাথে সাথে বেরিয়ে যেতে পারত না। হাওয়ার জন্যও জাহাজ অপেখ্যা করতো , কখনও কখনও মাসের পর মাস। নাবিক দের চরিত্র এর সুনাম কোনো কালেই ছিল না। সেই দিনেও তাই ইন্দোনেশিয়া এর দিকে দিকে ভারতীয়, চীনা নানা ধরনের লোকের মিসাল ঘটতে থাকলো।

সব সময়ই সাধারণ মানুষের ইতিহাস সব থেকে বেশি আকর্সনীয়। শ্রী বিজয়া দের কিছু কিছু প্রভাব থাইল্যান্ড এর দক্ষিণ এ দেখতে পাবো। মন্দির, শিল্পকলা সব কিছুর ভিতরে কিছু কিছু শ্রী বিজয়া প্রভাব কিছু কিছু রয়ে গেল। আজকের মালয় রা ই হয়ত সেই সময়ের শ্রী বিজয়া।
মুসি দক্ষিণ সুমাত্রার একটা বড় নদী। সেই মুসি নদীর ধারে ছিল শ্রী বিজয়া রাজধানী।

এই অনেক অনেক বন্দর ঘিরেই গড়ে উঠলো অনেক অনেক ছোট ছোট রাজ্য। শ্রী বিজয়া সাম্রাজ্য সম্পর্কে খুই কম জানা গেছে। ধরে নেবো যে এই সব ছোট ছোট রাজ্য নিয়েই তৈরী শ্রী বিজয়া।

শ্রী বিজয়া তো কিছুটা জানা গেল - এক গুচ্ছ ছোট মাঝারি বন্দর জনপদ নিয়ে তৈরী হওয়া এক সাম্রাজ্য। কিন্তু শৈলেন্দ্র রা? ভারতীয় দের এই শৈলেন্দ্র নিয়ে বেশ আগ্রহ আছে। নাম তো একেবারেই ভারতীয়।

৭০০ খিস্টাব্দের কাছাকাছি এলো শৈলেন্দ্র রা। কিছু ঐতিহাসিক বলেন কলিঙ্গ থেকে গিয়েছিলেন এই শৈলেন্দ্র রা। যাক.. . হয়ত এরা ইন্দোনেশিয়া এর লোকই ছিলেন। তবে সে যাই হোক - শৈলেন্দ্র রা খুবই ভারতীয় প্রভাবিত। আর কট্টর বৌদ্ধ। ওদের সময়ই তৈরী হলো বরবদুর এর সেই দারুণ মন্দির কমপ্লেক্স ।
এটা আবার একটা সমাপতন - ইলোরার বৌদ্ধ গুহা আর বরবদুর এর সময় প্রায় এক। ইলোরার বৌদ্ধ গুহা তৈরী শুরু হয়েছিল প্রায় ৫০০ সাল থেকে। হতেই পারে সেইলেন্দ্র রা সেই ইলোরার গুহা এর কথা শুনে বরোবদুর এর কথা ভাবলেন।

৭০০ খিস্টাব্দের কাছাকাছি - ভারতএ তখন বিশাল পাল সাম্রাজ্য, পশিম এ দিল্লি থেকে পূর্বে বাংলা পর্যন্ত পাল দের রাজ্যত্ব। রাষ্ট্রকুট দের বিশাল রাজ্যত্ব পশিমে। দক্ষিণ ভারতের দখল রয়েছে প্রধাণত ৩ দলের হাতে - চোলারা তামিল রাজ্যত্ব চালাচ্ছেন, পল্লব রা আজকের অন্দ্রপ্রদেশ দখল রেখেছেন, পান্দিয়াস এর দখলে ভারতের শেষ দক্ষিণ প্রান্ত। ধর্ম বলতে প্রধান দুটি - হিন্দু, বৌদ্ধধর্ম।জৈন ধর্ম ও ছিল, আজকের মতই কিন্তু রমরমা বলতে এই দুটির। তার ভিতর বৌদ্ধধর্ম ছিল প্রধাণ। ইলোরার বৌদ্ধ গুহা গুলো তৈরী হয়েছিল ৫০০ থেকে ৭০০ খিস্টাব্দের মধ্যে। কিন্তু কি ঘটল যে তার পরে আর ভারতে বড় বৌদ্ধ স্থাপত্যের এত অভাব ?

৮০০ খিস্টাব্দের শুরু র দিকের একটা সময়, ভারতের রাজনৈতিক মানচিত্র যে বড় পাল্টে গেল তা নয়। পাল্টে গেল ধর্মের মানচিত্র। আদি শংকর এর জন্ম আজকের কেরালা এর কাছাকাছি কথাও। শংকর জীবিত ছিলেন মোটে ৩২ বছর। কিন্তু তার ভিতর চিরকালের মতো ভারতবর্ষ পাল্টে দিলেন - একের পরে এক বৌদ্ধ পন্ডিত এর সাথে তর্কে জিতে হিন্দু ধর্ম কে ভারতে পুনরায় স্থাপন করলেন। শংকর এর নতুন হিন্দুত্ব্, হিন্দু এবং বৌদ্ধ এর মিলিয়ে তৈরী এক নতুন বাখ্যা। যাক, শংকর এর পরে বৌদ্ধ পন্ডিত রা খুঁজে বেড়াতে লাগলেন নতুন জায়গা। নজরে পড়ল ভারত এর পূর্ব প্রান্ত। আজকের বার্মা, কাম্বোডিয়া , থাইল্যান্ড। বৌদ্ধ ধর্ম ছড়িয়ে পড়ল এই দেশে।

শ্রী বিজয়া এর পুরো বিস্তার একটু দেখে নেবো। ছড়িয়ে পরেছিল অনেক অনেক দুরে। আজকের এই ম্যাপ এ যা জায়গা দেখছেন সবই আপনার পরের বছরের বেড়ানোর জায়গা হয়ে যেতে পারে। চাম্পা , খেমের, কম্বোডিয়া এর দারুন সব জায়গা। আনকোর ভাট এর অসাধারণ মন্দির এখানেই।






শ্রী বিজয়া কিন্তু ঠিক আজকে আমরা যে রকম মোঘল সাম্রাজ্য বুঝি তা ছিল না। এদের প্রধাণ আগ্রহ ছিল সমুদ্র পথে ব্যবস্যা করা। খুব জোর নদীর পর্যন্ত এদের আগ্রহ। তাই মুসি নদীর শুরু টাই দখল পরিবহণের কাজ এর দখল হাতে চলে এসেছিল। শ্রী বিজয়া সেই অর্থে প্রাচ্যের সুইজ ক্যানেল এর দখলে ছিলো। তাই টাকার অভাব কোনো দিনই ছিল না। একটু নিচের দিকে জাভা তে আর বালিতে ছিল অন্য দের দখল। শৈলেন্দ্র রা জাভা এর দখল নিয়ে ছিলেন।

বেশ তো শ্রী বিজয়া নিয়ে কথা হচ্ছিল শৈলেন্দ্র এসে কেমন যেন গুলিয়ে গেল না ? ম্যাপ দেখুন - জাভা এর ঠিক মাঝে কেদু। এই জায়গাটা দারুন রকমের সমতল। আগ্নেয়গিরি কিন্তু আগ্নেয়গিরির লাভা এ উপরে উর্বর চাষের জমি। শৈলেন্দ্র সভ্যতা ছিল প্রধানত চাষ নিয়ে। শ্রী বিজয়া এর জল নির্ভর অর্থনীতির পরিপূরক কিন্তু প্রতিযোগী না।

৯০০ খিস্টাব্দের কাছাকাছি এসে দেখলাম পল্লব রা ক্ষমতা থেকে চলে গেলেন, চোলা দের ক্ষমতা বাড়তে থাকলো। নাগাপত্তিনাম , চোল সাম্রাজ্য এর একটি বিখ্যাত সমুদ্র বন্দর , বর্তমানে তামিলনাড়ু, এর একটি জেলা। মধ্যযুগীয় সময়কাল থেকে এই বন্দর নগরী বাণিজ্যিকভাবে ও সাংস্কৃতিকভাবে , রাজনৈতিকভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পর পর দুজন শক্তিশালী চোল রাজা এলেন, রাজরাজ চোল (985-1014 ) এবং পুত্র রাজেন্দ্র চোল (1012-1018 খ্রিষ্টাব্দ) ।

এই রাজেন্দ্র চোল এর সময় চোল রাজারা জয় করলেন, কেদাহ। আজকের লংকাওই। লংকাওই এর বিচ রিসোর্ট এর প্যাকেজ টুর চারিদিকে। কেদাহ এই জয় ওই সমুদ্র পথ টার দখল তুলে দিল চোল দের হাতে। আর একটা জিনিস ও ঘটল - ইন্দোনেশিয়া এর শ্রী বিজয়া সাম্রাজ্য আসতে আসতে দূর্বল হতে থাকলো । কেদাহ থেকে শ্রী বিজয়া এর দুরত্ব টা বড় কথা নয়। আসল গুরুত্ব জাহাজ এর ট্রেড লেন হাতের বাইরে চলে গেল।

শ্রী বিজয়া দের সাথে চোলা দের অনেক লড়াই হয়েছে। রাজেন্দ্র চোল এর কাছে হারাটা শ্রী বিজয়ন দের একটা বড় ধাক্কা। আস্তে আস্তে অন্য রা ইন্দোনেশিয়া, বলা ভালো সুমাত্রা এর বন্দর গুলো দখল করতে থাকলো। এই অন্য দের একটা নাম আছে। এরাই মাজাপাহিট। ১৩০০ সাল নাগাদ মাজাপাহিট দের উত্থান। কুবলাই খান তখন জাভা এর কিছু জায়গা দখল করেছিলেন। মাজাপাহিট রাজা কুবলাই খান এর চীনা বাহিনী দের কচু কাটা করলেন বলা চলে। মাজাপাহিট রা হিন্দু - শৈলেন্দ্র দের থেকে এটা একটা বড় অমিল। মাজাপাহিট দের সময় টাই ইন্দোনেশিয়া এর প্রাচীন স্বর্ণ যুগ। আজকের ইন্দোনেশিয়া ফ্ল্যাগ এও মাজাপাহিট এর পতাকার প্রভাব রয়েছে।

গল্প টা আরো অনেক বড় বলা যায়। মাজাপাহিট রাজা, রানী দের অনেক গল্প বলা যেতেই পারতো। কিন্তু অল্প করে বলে এগিয়ে যাই। এই শ্রী বিজয়া রা ছড়িয়ে পড়তে লাগলেন। তেমন এক রাজা ছিলেন Sri Maharaja Sang Utama Parameswara Batara Sri Tribuwana. না , সখের লেখা তে আমি আর এটার বাংলা লিখতে পারলাম না। তিনি তুমাসিক (সিঙ্গাপুর এর পুরাতন নাম ) এ জনপদ তৈরী করেন। 1366 চীনা সম্রাট তাঁকে শাসক এর মর্যাদা দিলেন। কিছু টা তো ছিলোই মাজাপাহিট দের ঝামেলা করার জন্য। কিন্তু তার নাতি শ্রী মহারাজা পরমেশ্বারান কে পালাতে হলো সিঙ্গাপুর ছেড়ে। সেই হিসাবে আজকের মালয়েশিয়া হলো শ্রী বিজয়া এর উত্তরাধিকারী। কুদুকান বুকিত একটা পাথরের লিপির নাম। মালয় লেখার প্রথম নমুনা। সেটাও শ্রী বিজয়া এর মুসি নদীর ধারেই মিলেছে। আদি মালয় হলো পল্লব লিপি। আসলে এই শ্রী বিজয়া বা, অন্য দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া এর জনপদে তখন অনেক ভারতীয় আসতেন শুধু এডমিনিস্ট্রেটর হিসাবে। ধরুন আজকের ওয়ার্ক পার্মিট আর কি !!! তাই মালয়েশিয়া এর ভিতরে বেছে থাকলো শ্রী বিজয়া এর গৌরব। রাজা পরমেশ্বারান প্রথমে কিছু দিন প্রায় জলদসুর মতো চালালেও পরে তৈরী করলেন মালাক্কা। শ্রী বিজয়া এর সমুদ্র বন্দর তৈরী করার অভিজ্ঞতা কাজে দিল।

ইন্দোনেশিয়া তে পরে থাকলো মাজাপাহিট এর উত্তরাধিকার। তাই তো বলছিলাম মালাক্কা এর ইতিহাস জানতে গেলে ফিরে যেতে হবে আরো ৭০০ বছর আগে।
মাজাপাহীট রা সাম্রাজ্য বিস্তারও করে জল পথে (এই সব লড়াই ছিল জলের লড়াই , সেই সময় মাঠের লড়াই অন্য মাত্রা নিয়েছিল চিনে, মোঙ্গলদের হাতে )।
উইকিপেডিয়া এর ছবি টা সুন্দর , সেটা দেখালে বোঝা যাবে কি করে এই মাজাপাহীট সাম্রাজ্য ছড়িয়ে পড়েছিল পুরো






শেষ কথা - ইতিহাস না জানা যেন যেমন ঠিক না, ইতিহাস নতুন করে তৈরীও হয় । আজকের সাউথ ইস্ট এশিয়া সমৃধ্হির এক নতুন ইতিহাস তৈরী করছে।




Friday, 26 December 2014

মালাক্কা থেকে শুরু


সিঙ্গাপুর থেকে ২০০ কিলোমিটার মতো দূরত্ব, মালাক্কার। মালয়েশিয়া এর একদম দক্ষিণ এ। এই ঘুরে এলাম মালাক্কা থেকে। তবে এই লেখা ভ্রমন কাহিনী নয়। মালাক্কা, সাউথ ইন্ডিয়া, গোয়া , পর্তুগিজ সব কি করে একই সাথে জড়িত এই লেখা সেটা নিয়েই।

আমরা যে বিশ্বায়ন এর কথা বলি সেটা কিন্তু শুরু হয়েছিল মধ্যযুগ থেকেই। ১৫১১ সালে মালাক্কা দখল নিলো পর্তুগিজরা। আজকের মালাক্কা এর দেখবার অনেক কিছুর মধ্যেই পর্তুগিজ ইতিহাস। চার্চ, ফোর্ট সব মিলিয়ে মালাক্কা যেন একটা গোয়া। সেটা ঠিক এমনি এমনি নয়। ১৫০৩ সালে ভাস্কো দা গামা গোয়া তে দ্বিতীয় বার আক্রমন করে। মোটে ৮ বছরের ভিতর পর্তুগিজ রা চলে এলো মালাক্কা তে। এই রকমই কোনো জাহাজ এ করে সেদিন পর্তুগিজ রা মালাক্কা আক্রমন করেছিল।




ওপরের জাহাজ এর মডেল Flor do Mar, এই মডেল টা মালাক্কা মেরীটাইম জাদুঘর এর। মালাক্কা দখল এর কিছু দিন পরেই ডুবে গেল এই জাহাজ। এর ইতিহাস ও বলবার মতো। কেন লিসবন এ এই জাহাজ তৈরী হতো , কেন ভারতেই, কেন বেজিং এ নয়। এই সব ছোট ছোট কাহিনীর মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে পশ্চিম এর কাছে পূর্ব এর হেরে যাবার আসল ইতিহাস। মালাক্কা সুলতান কে পরাজিত পর্তুগিজ দের সেইদিন বেশি সময় লাগে নি। গোয়া তে কিন্তু এর থেকে বেশি সময় লেগেছিল । মালাক্কা সেই দিন ছিল মালাক্কা সুলতানদের হাতে। মালাক্কা সুলতানদের ইতিহাস থেকেই শুরু এই কাহিনীর।


তবে সব শুরু এরও একটা শুরু থাকে। মালাক্কা এর ইতিহাস কে ৪ টে  ভাগ এ বলা যায় :

  1. পর্তুগিজ দের আসার আগের ইতিহাস  
  2. পর্তুগিজ - ডাচ দের ইতিহাস 
  3. ব্রিটিশ দের শাসনের ইতিহাস 
  4. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এর পরের থেকে আজকের মালাক্কা

একটা লেখা তে শেষ করা যাবে না। তাই এর প্রথম টা নিয়েই এই লেখা টা। পর্তুগিজ দের আসার আগের ইতিহাস
আসলে মালাক্কার মালাক্কা হয়ে ওঠার ইতিহাস।  যখন পর্তুগিজ রা মালাক্কা দখল করলো তখন মালাক্কা চালাছিল্লেন মালাক্কা সুলতানরা।  নামে সুলতান হলেও এরা কিন্তু আমাদের মোগলদের মত অন্য কোনো দেশ থেকে ছুটে আসা লোক না।  সুলতানরাই মালাক্কা, যা আগে ছিল একটা গ্রাম মাত্র (গ্রাম বলাও বেশি বলা হলো) সেই মালাক্কা কে একটা সমৃধ্হ অঞ্চল করেছিলেন - তাও মাত্র ১০০ বছরের ভিতর।

মালাক্কা সুলতান দের ইতিহাস দিয়েই বলা যাক গল্পটা। এই মালাক্কা সুলতানদের আদি পুরুষ ছিলেন পরমেশ্বর। সেই দিনের মালাক্কা ছিল জলদস্যুদের একটা গ্রাম। পরমেশ্বর সেই নেহাত ই অচা মালাক্কা কে পাল্টে করলেন একটা সমৃধ্হ অঞ্চল। এমন মালাক্কা এর প্রতিপত্তি হলো যে ১০০ বছরের মধ্যে দূর ইউরোপ থেকে পর্তুগিজ রা দখল করার জন্য ছুটে এলো।

পরমেশ্বর কিন্তু  প্রথমে ছিলেন আজকের সিঙ্গাপুর এর রাজা। ১৩৯০ এর কাছাকাছি পরমেশ্বর সিঙ্গাপুর এর রাজা ছিলেন। সেই সিঙ্গাপুর থেকে পালিয়ে তিনি মালাক্কা এলেন। সিঙ্গাপুর ছিল রাজার দুর্গ।  আজকের সিঙ্গাপুর এ রাজা পরমেশ্বর এর সেই যুগের দুর্গের কোনো চিহ্ন নেই।  লোক কথা বলছে রাজার ছোট্ট সিঙ্গাপুর ঘিরে ছিল এক উন্নত দুর্গ।

আক্রমণকারীরা দুর্গ সোজা পথে দখল করতে না পেরে খাবার এর সাপ্লাই লাইন বন্ধ করে দিল। সমুদ্র পথে আসত সেই দিন সব ফুড সাপ্লাই। তাই যেই খাবার বন্ধ হয়ে গেল দুর্গ এর পতন সময় এর অপেক্ষা। রাজা পিছন দিক পালালেন মালয়েশিয়া এর দিকে।  পথে পরলো একটা গ্রাম্, সেদিনের মালাক্কা। রাজা ঠিক করলেন এখানেই বসাবেন নতুন রাজ্য​. চার পাশের লোক কে পালিয়ে আসা রাজা সত্যই একটা নতুন সভত্যা শুরু করেছিলেন।

তা রাজা পরমেশ্বর সিঙ্গাপুর থেকে পালালেন কেন, আর কার তারা খেযেই পালালেন ?  মাজাপাহীট দের তাড়া খেয়ে সিঙ্গাপুর থেকে পালিয়ে যেতে হয়, রাজা কে। মাজাপাহীট  দের তখন্ রাজ্যপাট পুরো ইন্দোনেশিয়া জুড়ে। সত্যি বলতে গেলে আজকের ইন্দোনেশিয়া হয়ত হতই না মাজাপাহীট রা এই সাম্রাজ্য গঠণ না করলে।
সেই মাজাপাহীট রাই ২০০ বছর পরে মালাক্কা এর এই সুলতানদের প্রভাব প্রতিপত্তি এর ছায়া তে চাপা পরে যায়।

তা এই মাজাপাহীট  রা কারা আর রাজা পরমেশ্বর  ই বা কোথা থেকে এসেছিলেন।  সেই টাই পরের গল্প। আর সেটা আলোচনা করার সময় একটু জানতে হবে ইতিহাসের লেখার কঠিন জায়গা গুলো, মালাক্কা এর ভৌগলিক গুরুত্ব, ধর্মের ইতিহাস। আর সব কিছুর শেষ এ যাব ইন্দোনেশিয়া  তে।

আমাদের রাজা পরমেশ্বর এর পুরো নাম ছিল রাজা পরমেশ্বর ইস্কান্দার। সর্ব ধর্ম সমন্বয়ের এর থেকে আর ভালো নাম কি হতে পারে ! ইস্কান্দার নাম টা কেন নিয়েছিলেন বলা মুশকিল। মালাক্কা এর জাদুঘর দাবি করে মুসলিম হবার পরে রাজার ভাগ্য ফিরে আসে। সত্যিই তো। যদি ধরে নি রাজা মালাক্কা এসে ইস্কান্দার নাম নিয়েছিলেন তাহলে তো বটেই।

মাজাপাহীট ইতিহাস বলতে গেলেই বলতেই হবে হিন্দু সভ্যতার একটা নিদারুণ দুর্বলতার কথা। লিখিত ইতিহাসের অভাব। এই লেখা জিনিস টা হিন্দু দের একে বারেই ছিল না। আজকেও নেই। অফিস এ কাউকে কিছু লিখতে বললেই লোককের মুখ ভার হয়ে যায়। বেদ, উপনিসদ থেকে প্রায় সব কিছুই স্মৃতি। লেখা র ব্যাপক প্রচার শুরু হলো ইসলাম থেকে। চীন এর লেখা র চল ছিল। এমনকি প্রথম ১০০০ বছরের ইতিহাস এর মূল উপাদান এসেছে হিউএন সেং আর সেই রকম চীনা পর্যটনকারী দের লেখা। তাই মধ্যযুগ এ যখন সবাই প্রিন্টিং শিখে গেল, ভারত এর হিন্দু সভত্যা এক ধাক্কা তে জ্ঞান বিজ্ঞান এ বিশাল পিছনেচলে গেল। তবে এই বার whatsapp , ফেসবুক এর যুগ এ বোধ হয় হিন্দু ধর্মের পুনর্জাগরণ ঘটবে, অন্য দের লেখার চল টা চলে যাবে। এই ভূমিকার দরকার এই টা বোঝানোর জন্য যে মাজাপাহীট দের লিখিত ইতিহাস এর খুব-ই অভাব। ঠিক তেমন ই অভাব ছিল রাজা পরমেশ্বর এর ইতিহাস এর। ১৬০০ এ মালাক্কা যখন পুরোটাই ইসলাম এর , তখন ই লেখা হলো ঠিক মত মালয় ইতিহাস। মাজাপাহীট দের আজকের কিছুটা চিহ্ন দেখা যায় বালি তে , বালি আজকেও হিন্দু। ঠিক ভারতের মত হিন্দু না , কিছুটা অন্য রকম হিন্দু। সেখানে রামায়ন রয়েছে, রাম রয়েছে, কিছু টা ভারত রয়েছে - অল্প কথা তে বলতে গেলে ভারত থেকে একদন যেন মহাভারত বা রামায়ন এর যুগে এই দ্বীপ চলে এসেছিল। হয়তো সত্যি টা কোনদিন জানা যাবে না। তবে এটা একটা হিন্দু সাম্রাজ্য বিস্তার এর গল্প না হতেও পারে। হয়তো হিন্দু দের দেখে অনুপ্রানিত হয়ে সাধারণ লোক হিন্দু ধর্ম নিয়েছিল। আজও ইন্দোনেশিয়া এর দ্বীপ দ্বীপ এ দেখতে পাবো আদিবাসীদের, যাদের ধর্ম হিন্দু না, বৌদ্ধ না।

মালাক্কা, সিঙ্গাপুর এর ভৌগলিক অবস্থান এর একটা অসাধারণ গুরুত্ব আছে। বিশাল এশিয়া এর ল্যান্ড মাস শেষ হয়ে আসছে সিঙ্গাপুর এর উপরে। তার পরে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত আছে শুধু অসংখ্য ছোট ছোট দ্বীপ। দ্বীপ এর মাঝে মাঝে সমুদ্র পথ , ভীষণ স্রোত , সেই যুগ এর জাহাজ কেন, আজকের জাহাজ এর পক্ষেও খুব বিপদজনক। তাই স্ট্রেইটস অফ মালাক্কা আর স্ট্রেইটস অফ সিঙ্গাপুর মিলে সুরু সমুদ্র পথ সিঙ্গাপুর এবং ইন্দোনেশিয়া এর ভিতর সেটা খুব-ই গুরুত্ব রাখতো (আজও রাখে , আজও পৃথিবীর প্রধান শিপিং লাইন এর ভিতরে এই স্ট্রেইটস লাইনস ) সেই জন্যই ১৫১১ সালে পর্তুগিজ, তার পরে ডাচ আর তার পরে ইংরাজ রা ফিরে ফিরে আসে এই মালাক্কা তে । পর্তুগিজ দের বাংলাদেশ এ আসার সময় ধরা যাক ১৫৬০। মালাক্কা দখল এর ৫০ বছর পরে । বান্ডেল চার্চ ১৬০০ সালের, সময় এর সমাপতন, সেই সময় ই মালাক্কা পর্তুগিজ দের থেকে ডাচ দের হাতে চলে গেল।

সেই দিনের ইন্দোনেশিয়া এর জায়গাতে শ্রী বিজয়া সাম্রাজ্য। নাম টা শুনলেই কেমন মনে হই ভারতীয়। দক্ষিণ ভারতের চোলা রাজারা গিয়ে দখল করেছিল কিছু টা আজকের ইন্দোনেশিয়া। শুধু ইন্দোনেশিয়া নয় আরো বিসর্তীর্ণ অঞ্চল এ চোলা সাম্রাজ্য ছড়িয়ে পড়েছিল। আজকের লংকাওই , মালয়েশিয়া এর একদম উত্তরে প্রায় থাইল্যান্ড এর সীমান্তে একটা খুব পরিচিত দ্বীপ, টুরিস্ট এর খুব চেনা জায়গা। চোলা রা সেই লংকাওই দখল করে নিয়েছিল। চোলা দের দক্ষিণ এশিয়া এর এই সাম্রাজ্য এর নাম শ্রী বিজয়া। আমাদের স্কুল বই গুলোর ইতিহাস শুধু মোঘল দের ইতিহাস।
তাই আমরা জানতেই পারি নি তামিল দের এই অসাধারণ ইতিহাস। বেজাং ভ্যালি হলো উত্তর মালয়েশিয়া এর একটা অঞ্চল। আজকের মালয়েশিয়া এর সব থেকে বড় আর্কিওলজিকাল সাইট। প্রায় ২০০০ বছরের পুরনো অনেক মন্দির জানান দিচ্ছে হিন্দু এবং বৌদ্ধ প্রভাব। কোনো ভাবে সেই সময় হিন্দু ধর্ম চলে এসেছিল এই অঞ্চলে।

হিন্দু দের গর্ব করার আগে এটাও মনে রাখতে হবে তখন এই অঞ্চলে যা ধর্ম ছিল সবই ভারত থেকে শুরু --হিন্দু, বৌদ্ধ। ধর্ম এর প্রতিযোগিতা শুরু হলো প্রথম যখন ইসলাম এলো আর তার পরে ইউরোপিয়ান রা এলো। কি করে এই হিন্দু রাজ্য গুলো মুসলিম হয়ে গেল সেটা নিয়ে এর পরের ব্লগ এ আলোচনা করব। সেটাও এই ইতিহাস এর একটা অবিছিন্ন অংশ। শুধু এই টুকু বলে রাখি ইন্দোনেশিয়া প্রায় পুরো ইসলাম, মালয়েশিয়া ইসলাম কিন্তু তার পরের এশিয়া এর বাকি মাপ টা দেখেন যদি দেখবেন আইল্যান্ড ইসলাম এর চিহ্ন রয়েছে কিন্তু, ইসলাম প্রধান ধর্ম না। ম্যাপ এ দেখলে মনে হবে থাইল্যান্ড যেন ইসলাম এর প্রসারের বাফার জোন। এই অঞ্চলে ইসলাম এ প্রসার এর আসার ঠিক আগের মুহূর্তের গল্প এটা। 

Saturday, 1 November 2014

হারিয়ে গেছে এই নাম গুলো

হারিয়ে গেছে এই নাম গুলো।  এক কালের দিকপাল ফুটবল প্লেয়ার ছিলেন এই হারিয়ে যাওয়া নাম গুলো। এই লেখা টা সেই হারিয়ে যাওয়া নাম নিয়ে। উদেশ্য একটাই, নিজে নাম গুলো জানা আর অন্যদের জানানো। নাম গুলো সবই নিয়েছি হারিয়ে গেছে এমন একটা বই থেকে নেওয়া। এই বই টার নাম হলো কলকাতার ফুটবল। লেখক 'আরবি', মনে তো হোয় এটা ছদ্দনামে লেখা।বই টার ফরওয়ার্ডিং নোট আবার লেখা গোষ্ঠ পাল এর। পাবলিশ করেছিলেন ইস্ট লাইট পাবলিশিং হাউস। ১৯৫৫ সাল।
কলকাতার ফুটবল এর উপরে আরো বেশ কিছু বই আছে - ইংলিশ, বাংলা দুটো ভাষা তেই। কিন্তু আমার মনে হয় "কলকাতার ফুটবল" ই প্রথম বাংলা বই বাংলার ফুটবল এর ইতিহাস এর উপরে। এর পরে আরো বই ছাপানো হয়েছে - রূপক সাহার বই গুলো প্রতি টাই বেশ ভালো লেখা - সব থেকে বড় অনেক খেটে লেখা। তবে "কলকাতার ফুটবল" সমকালীন ফুটবল এবং ফুটবল এর চরিত্র যে ভাবে তুলে ধরেছে তা দুর্লভ।
আরবি এর বইটার গুরুত্ব অনেক জায়গা তেই। অনেক জায়গা তেই লেখক নিয়ে এসেছেন প্লেয়ার দের জানার সুবিধা। নিয়ে এসেছেন এমন সোর্স , যা বোধ হই আজকে হারিয়ে গেছে। এই বইটাও তো হারিয়েই গেছে। আগরতলা লাইব্রেরি থেকে হারিয়ে গেলে হয়ত কপি ও থাকবে না।
ফুটবল এর আগে অল্প কিছু কথা বলা দরকার বইটার লেখা সম্পর্কে। ভারত তখন সবে স্বাধীন হয়েছে। বই টির মধ্যে নতুন কিশোর দেশ এর প্রাণ রয়েছে। ভাষার মধ্যে রয়েছে একটা চন মনে ভাব। এটা ফুটবল খেলা। ফুটবল এর ভিতরে আনন্দ, প্রাণ এর যোগ বই এর ভাষা তে। বই সেই প্রাণ ধরে রেখেছে। গোষ্ঠ পাল একটা ছোট্ট ভূমিকা লিখেছিলেন। সেটা বইটার গুরুত্ব খুব সহজে অল্প কথাতে তুলে ধরেছে।
প্রায় ২০০ পাতার বই।  পুরো বই তুলে ধরার দরকার নেই। বইটার শুরু টা বড় ভালো।  না দিলেই নয়। 
ইংরেজ ঘর থেকে বাইরে আসতে জুতো মোজা নেকটাই না বেধে বার হতে পারে না, বলে লাঠি মারার সময় তাদের কে পায়ে জুতো থাকবে তাই নিয়ে কোনো প্রশ্নই উঠতে পারে না। এদিকে বাঙালী ছেলেদের জন্ম কাটে শুধু  
পায়ে, খুব জোর খোরম কি চটি দিয়ে পায়ের তলার মাটির সাথে প্রতক্ষ্য স্পর্শ্য এড়িয়ে চলে। আধুনিক জীবনের দাবিতে বাড়ির বাইরে যাবার সময় যদি বা জুতো পরতে হয়, বাড়িতে ঢুকেই সঙ্গে সঙ্গেই টান মেরে খুলে ফেলে সেই জুতো , আলগা পায়ে হওয়া লাগিয়ে স্বস্তির হাফ  ফেলে।  তাই ফুটবল খেলতে গিয়ে তাদের বুটের কথা মনে উদয় হয় নি। শুধু পায়ে বল নিয়ে শুট করার, পায়ের আঙ্গুল দিয়ে কৌশলে বল টেনে নেওয়া এবং আলগা পায়ে তর তর করে দৌড়ানোর মধ্যে দিয়ে বাঙালী ইংরেজ এর ফুটবল কে প্রকৃত ফুটবল রূপে দিল নতুন প্রতিষ্ঠা। 

প্রথম যুগে দলে দলে বাঙালী ছেলেরা খেলতে আসতো নর্থ কলকাতার রাজবাড়িতে। নিজেদের মধ্যে দোল ভাগ করে খেলে।  তোর জোরের ব্যাপার নেই, গায়ে গেঞ্জি, পরনে হাফ প্যান্ট বা হাটু তুলে ধুতি এটে মাঠে নেমে গেলেই হতো।  খেলার পরে একটু খাওয়া দাওয়া ? সেই যুগে রাজবাড়িতে এমনিতেই তার ব্যবস্থা থাকতো। 

পপ্রথম নেটিভ ক্লাব ছিল শোভাবাজার। সেটা ছিল উত্তরের ক্লাব। উল্টো দিকের প্রথম নেটিভ ক্লাব ১৮৮৫ সালের ন্যাশনাল এসোসিয়েশন। আজকের রামকৃষ্ণ মিসন শিশু মঙ্গল হসপিটাল এর জায়গাতে ন্যাশনাল এর প্রথম মাঠ। সাহেব দের সাথে জেতার প্রথম রেকর্ড কিন্তু ন্যাশনাল এর।  ১৯০০ সালে ট্রেডস কাপ জিতলো ন্যাশনাল।  

ইস্ট বেঙ্গল এর প্রথম ডিভিশন এ ওঠা ১৯২৪ সালে। সেই প্রথম বছরের ইস্ট বেঙ্গল এর ষ্টার প্লেয়ার ছিলেন মোনা দত্ত।  মোনা আজকের প্রফেশনাল প্লেয়ার দের মতই দল বদল এ ওস্তাদ।  উয়াড়ি তে গোলকীপার ছিলেন। ইস্ট বেঙ্গল এ হলেন সেন্টার ফরওয়ার্ড। বা পায়ের শট, দুরন্ত হেড , সুযোগ সন্ধানী মুভমেন্ট, সব মিলিয়ে মোনা দত্ত ছিলেন আজকের ভাষা তে যাকে বলে কমপ্লিট ফরওয়ার্ড। 
ময়দানে বুট পরে প্রথম খেলতেন সুধীর চ্যাটজী'। তার পরে হামিদ।  মুসলিম হলেও হামিদ খেলতেন মোহনবাগান এ। 
আর তখনকার একমাত্র দাড়িওলা প্লেয়ার। 

হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি 

১৮৭২          ক্যালকাটা ফুটবল ক্লাব , এরা কিন্তু প্রথমে রাগবি খেলত। পরবর্তী কালের ক্যালকাটা এর সাফল্যের কাহিনীর তুলনা নেই। লীগ, শিল্ড মিলিয়ে ক্যালকাটা এর সাফল্য ১৯৩০ এর দশক পর্যন্ত আর কোনো ক্লাব এর ছিল না। 
১৮৭৮         ট্রেডস ক্লাব, পরে নাম পাল্টে হলো ডালহৌসি এথলেটিক ক্লাব, আজও এর টিমটিমে অস্তিত্ব আছে 
১৮৭৯         শোভাবাজার, জমিদার দের ক্লাব, নেটিভ দের প্রথম ক্লাব, রাজ বাড়ির  জিতেন্দ্রকৃষ্ণ দেব ছিলেন                           প্রতিষ্ঠাতা 
১৮৮৪         কুমারটুলি ক্লাব
১৮৮৫         ন্যাশনাল  - প্রথম ট্রেডস কাপ জেতা সেই ১৯৯০ এ, প্রাথমিক উদেশ্য ছিল শরীর গঠন 
১৮৮৯         মোহনবাগান, এরিনেস ও বোধ হয় ওই বছরেই শুরু হয় 
১৮৮৯         ট্রেডস কাপ এ নর্মান প্রিচাড এর প্রথম হ্যাট্রিক , এই নর্মান প্রিচাড ই পরে ভারত থেকে অলিম্পিক এ প্রথম মেডেল পেয়েছিলেন।  

মোহন বাগান এর প্রথম নাম ছিল মোহনবাগান স্পোর্টস ক্লাব। সাহেব পন্ডিত এর কাছে মতামত চাইতে গেলেন কর্তারা। সাহেব জানতে চাইলেন ক্লাব এর কি মাছ ধরা, শিকার করা এই সব কিছু এর পরিকল্পনা আছে ? নেই শুনে মত দিলেন নাম পাল্টে হওয়া উচিত এথলেটিক ক্লাব। সেই থেকে মোহনবাগান এর নাম পাল্টে গেল। 



পূবালী ঝড় 

এমন শিরোনাম পাল্টানোর দরকার কি।  "পূবালী ঝড়" চ্যাপ্টার এ লেখক বলছেন কি করে পূর্ব বাংলাতে ফুটবল এর ঝড় উঠলো।   যখন কলকাতাতে ফুটবল এর শুরু , তার কাছাকাছি সময় এ শুরু পূর্ব বাংলাতেও।  ঢাকা তে ইংরাজ 
পল্টন দল নিজেদের মধ্যে নিয়মিত খেলত। আস্তে আস্তে ফুটবল ঢাকার সাধারণ মানুষ এর খেলা হয়ে যায়।  পূর্ব বাংলার অন্য প্রান্তের থেকে ঢাকা তে খেলতে আসতে থাকলো উদীয়মান প্রতিভা।  ঢাকার তখন ২ প্রধান ক্লাব। উয়ারী আর ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং। উয়াড়ি আবার ইংল্যান্ড এর আর্সেনাল কে নকল করে লাল সাদা জার্সী পরে খেলত। তবে ঢাকার ক্লাব এর বরাবরই ইচ্ছা ছিল কলকাতা তে এসে করে দেখানো।  উয়াড়ি খেলা শুরু করলো কলকাতার 
আই. ফ. এ শীল্ড এ।  ১৯১৮ সালে উয়াড়ি মোহন বাগান কে ১-০ তে হারিয়ে দিল।  কানু রয় গোষ্ঠ পাল কে কাটিয়ে সেই দিনের খেলার এক মাত্র গোল দিলেন। উয়াড়ি কলকাতা তে খেলতে না এলে হয়তো ইস্ট বেঙ্গল ক্লাব এর প্রতিষ্ঠাই হত না। ইস্ট বেঙ্গল এর প্রথম অধিনায়ক, যিনি আবার ইস্ট বেঙ্গল এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা খেলতেন উয়াড়ি এর রাইট আউট এ। পাখি সেন, হিরেন সেন, মোনা দত্ত, ভানু দত্ত, জ্ঞানা পোদ্দার এরা সবাই ইস্ট বেঙ্গল এর প্রথম দিকের প্লেয়ার।  সবাই এসেছিলেন উয়াড়ি থেকে।

মনে রাখতে হবে প্রথম যুগে একটার নিয়ম এর কথা।  এক জন কে সারা বছর একই ক্লাব এ খেলতে হবে এমন কোনো নিয়ম সেই যুগে ছিল না।  কোনো এক প্রতিযোগিতায় এক দলের হয়ে খেলে অন্য দলের হয়ে আর এক প্রতিযোগিতা যে কেউ খেলতে পারত।


ইস্ট বেঙ্গল
বই এর শেষ চ্যাপ্টার ইস্ট বেঙ্গল এর ওপর। ১৯৪০ এর শেষ থেকে ১৯৫০ মাঝ পর্যন্ত হলো ইস্ট বেঙ্গল এর ইতিহাস। ১৯৫৫ তে লেখা এই বই।  ১৯৫৬ তে মোহন বাগান আবার জিতবে লীগ। তার পর থেকে মোহন বাগান  এর রাজোত্ত চলবে প্রায় ১৯৬৫পর্যন্ত। মাঝে একবার যদিও ইস্ট বেঙ্গল জিতেছিল ১৯৬১ তে। তবুও ৬০ এর দশক মোহন দশক। বইটা তার আগে লেখা বলে ইস্ট বেঙ্গল এর কথায় শেষ হচ্ছে। দেখা যাক ইস্ট বেঙ্গল এর কি কি নামের কথা রয়েছে।


আপ্পা রাও বোধহই ভুলে যাওআ নাম না। কিন্তু নীহার মিত্র, অমিতাভ মুখার্জী কে কি লোকে মনে রেখেছে। সুনীল ঘোষ ছিলেন নামকরা ফরওয়ার্ড। মোনা মল্লিক উইং এর প্লেয়ার ছিলেন। ভারতীয় জাতীয় দলের নিয়মিত প্লেয়ার। বেশি কথা তে কাজ কি  - সোজা বইয়ের ভাষা তুলে ধরা যাক। 
  


পাখি সেন এর নাম আজকেও শোনা যায়। ভেঙ্কটেশ, সালে, আপ্পা রাও - ইস্ট বেঙ্গল ক্লাব টেন্ট এ গেলে দেখা পাবো। ইস্ট বেঙ্গল ভোলেনি। 



বই টা আর খুব কম লোকই পড়বেন, তাই শেষ করার আগে শেষ পাতা টা এখানে দিয়ে যাই।  বই শেষ হচ্ছে উজ্জ্বল এক সম্ভবানার মধ্যে। 














Thursday, 18 September 2014















সময়টা ধরা যাক ৭০০ খিস্টাব্দের কাছাকাছি।  সেই সময় থেকে পরের ৮০০ বছরের ভিতর দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া এর পরিবর্তনের ইতিহাস টাই এই গল্প। ইতিহাস বলতে গেলেই বলতেই হবে হিন্দু সভ্যতার একটা  নিদারুণ দুর্বলতার কথা।  লিখিত ইতিহাসের অভাব।  এই লেখা জিনিস টা হিন্দু দের একে বারেই ছিল না।  বেদ, উপনিসদ থেকে প্রায় সব  কিছুই স্মৃতি।  লেখা র ব্যাপক প্রচার শুরু হলো ইসলাম থেকে।  চীন এর লেখা র চল ছিল।  এমনকি প্রথম ১০০০ বছরের ইতিহাস এর মূল উপাদান এসেছে হিউএন সেং আর সেই রকম চীনা পর্যটনকারী দের  লেখা। 


এই সময় এর উপাদান তাই বেশ কম।  


৭০০ খিস্টাব্দের কাছাকাছি - ভারতএ তখন বিশাল পাল সাম্রাজ্য, পশিম এ দিল্লি থেকে পূর্বে বাংলা পর্যন্ত পাল দের রাজ্যত্ব। রাষ্ট্রকুট দের বিশাল রাজ্যত্ব পশিমে। দক্ষিণ ভারতের  দখল রয়েছে প্রধাণত ৩ দলের হাতে  - চোলারা তামিল রাজ্যত্ব চালাচ্ছেন, পল্লব রা আজকের অন্দ্রপ্রদেশ দখল রেখেছেন, পান্দিয়াস এর দখলে ভারতের শেষ দক্ষিণ প্রান্ত।  ধর্ম বলতে প্রধান দুটি - হিন্দু, বৌদ্ধধর্ম।জৈন ধর্ম ও ছিল, আজকের মতই কিন্তু রমরমা বলতে এই দুটির। তার ভিতর বৌদ্ধধর্ম ছিল প্রধাণ। ইলোরার বৌদ্ধ গুহা গুলো তৈরী হয়েছিল ৫০০ থেকে ৭০০ খিস্টাব্দের মধ্যে। কিন্তু কি ঘটল যে তার পরে আর ভারতে বড় বৌদ্ধ স্থাপত্যের এত অভাব ?


৮০০ খিস্টাব্দের শুরু র দিকের একটা সময়। ভারতের রাজনৈতিক মানচিত্র যে বড় পাল্টে গেল তা নয়।  পাল্টে গেল ধর্মের মানচিত্র।  আদি শংকর এর জন্ম আজকের কেরালা এর কাছাকাছি কথাও।  শংকর জীবিত ছিলেন মোটে ৩২ বছর।  কিন্তু তার ভিতর চিরকালের মতো ভারতবর্ষ পাল্টে দিলেন - একের পরে এক বৌদ্ধ পন্ডিত এর সাথে তর্কে জিতে হিন্দু ধর্ম কে ভারতে পুনরায় স্থাপন করলেন।  শংকর এর  নতুন হিন্দুত্ব্ হিন্দু এবং বৌদ্ধ এর মিলিয়ে তৈরী এক নতুন বাখ্যা।  যাক, শংকর এর পরে বৌদ্ধ পন্ডিত রা খুঁজে বেড়াতে লাগলেন নতুন জায়গা।  নজরে পড়ল ভারত এর পূর্ব প্রান্ত।  আজকের বার্মা, কাম্বোডিয়া , থাইল্যান্ড। বৌদ্ধ ধর্ম  ছড়িয়ে পড়ল এই  দেশে। 


৯০০ খিস্টাব্দের কাছাকাছি এসে দেখলাম পল্লব রা ক্ষমতা থেকে চলে গেলেন, চোলা দের ক্ষমতা বাড়তে থাকলো। নাগাপত্তিনাম , চোল সাম্রাজ্য এর একটি বিখ্যাত সমুদ্র বন্দর , বর্তমানে তামিলনাড়ু, এর একটি জেলা। মধ্যযুগীয় সময়কাল থেকে এই বন্দর নগরী বাণিজ্যিকভাবে ও সাংস্কৃতিকভাবে , রাজনৈতিকভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।  পর পর দুজন শক্তিশালী চোল রাজা এলেন, রাজরাজ চোল (985-1014 ) এবং পুত্র রাজেন্দ্র চোল (1012-1018 খ্রিষ্টাব্দ) ।


এই রাজেন্দ্র চোল এর সময় চোল রাজারা জয় করলেন,  কেদাহ। আজকের লংকাওই। লংকাওই এর বিচ রিসোর্ট এর প্যাকেজ টুর চারিদিকে। কেদাহ এই জয় ওই সমুদ্র পথ টার দখল তুলে দিল চোল দের হাতে। আর একটা জিনিস ও ঘটল -  ইন্দোনেশিয়া এর শ্রী বিজয়ন সাম্রাজ্য আসতে আসতে দূর্বল হতে থাকলো । কেদাহ থেকে শ্রী বিজয়ন এর দুরত্ব টা বড় কথা নয়।  আসল গুরুত্ব জাহাজ এর ট্রেড লেন হাতের বাইরে চলে গেল। 


এই কথা বলতে বলতে শ্রী বিজয়ন এর কথা চলেই এলো। আজকের ইন্দোনেশিয়া এর জায়গাতেই ছিল শ্রী বিজয়ন সাম্রাজ্য। বাঙালি পাঠক কে একটু ভূগোল মনে করিয়ে দিতে হবে - বালি বেড়াবার কথা অনেকই ভাবেন। বালি ইন্দোনেশিয়া এর একটা দ্বীপ। প্রায় বেশ কিছু হাজার দ্বীপ নিয়ে ইন্দোনেশিয়া আজকের সব থেকে বড় মুসলিম দেশ। ইন্দোনেশিয়া কে সহজে বোঝানোর জন্য বলি ৩ তে ভাগ - সুমাত্রা, জাভা, বালি। প্রায় ১৪০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়া তে ভারতের ছাপ সর্বত্র। ভারতের  লোক এসে ইন্দোনেশিয়া দখল করেছিল এই ধারণা  অনেকেরই।  সেটা ঠিক না।  প্রায় ৫০০০০ বছর ধরে মানুষ বসবাস করছে এই ইন্দোনেশিয়া ত়ে। অতি প্রাচীন এক সভত্যা। সমুদ্র পথে ভারত থেকে লোককের চলা চল ছিল, বাবস্যা বানির্জ্য ছিল। সেই থেকে ভারতের প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছিল। শ্রী বিজয়ন নাম টা কি করে চালু হলো সেটা বলতে পারছি না ।  


শেষ কথা - ইতিহাস না  জানা যেন যেমন ঠিক না, ইতিহাস নতুন করে তৈরী করাও যায়। আজকের সাউথ ইস্ট এশিয়া র সামনে সুযোগ এক নতুন  ইতিহাস তৈরী করার।   



Saturday, 13 September 2014

দমদম এর স্মৃতি

সিঙ্গাপুর এর পূর্ব্ প্রান্তের সাগরের অপরের একটা জেটি তে দাড়িয়ে দাড়িয়ে প্লেন এর উড়ে যাওয়া দেখতে দেখতে মনে পড়ে গেল দমদম এর কথা।  কলকাতার বিমানবন্দর মানেই দমদম। দমদম বিমানবন্দর এর প্রায় ১০০ বছর হতে চললো।  মাঝের ১০০ বছরে একটা বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়ে গেল, দেশ দুটুকরো হয়ে গেল।  ইন্টারনেট নামে এক আজব জগত খুলে গেল - এ যেন এক আজব হাজারদুয়ারী। হাজার হাজার দরজার ভিতর দিয়ে অতীত এর আলো এক অচেনাকে চেনার হাতছানি দিচ্ছে।  এই লেখা সেই ফিরে দেখার চেস্টা। ইন্টারনেট এর একটা একটা দরজা খুলে দেখা ভিতরে কি লুকিয়ে আছে !
কাগজের পাতায়, বই এর মলাটের ভিতরে ভিতরে দমদম এর হারানোর দিন গুলো একটা করে উঠে আসুক।  তাই এটা শুধুই ওড়ার ইতিহাস না - যুদ্ধের ইতিহাস, মানুষ এর না খেতে পাওয়ারও ইতিহাস। আচমকা একটা দরজা খুলে দেখি, কবিগুরু দাড়িয়ে আছেন !!! এই বিমানবন্দরের গল্পতে উনিও এসে গেলেন। চমকে গেলাম পাশের ঘর থেকে কান্নার আওয়াজ পেয়ে -    দমদম এর অতীত এর সাথে জড়িত আছে দুর্ঘটনার ইতিহাস। আছে কলকাতার জাপানি আক্রমণ এর কাহিনী ও।

পুরনো কাগজের পাতা উল্টাতে উল্টাতে ফিরে যাওয়া যাক ভুলে যাওয়া এক ইতিহাস এর দিকে - সেই ইতিহাস কলকাতার আকাশ এর বিমান চলাচলের ইতিহাস।  বিমান চলার এই ইতিহাস শুধু কলকাতার আকাশে র দিকে তাকিয়ে লেখা - তাই দমদম এয়ারপোর্ট ই এই লেখার নায়ক। বাকি গল্পের মত এতেও অন্য বর্ণময় চরিত্র আছে। কখনো যেন তারাই নায়ক।   দমদম এয়ারপোর্ট এর ইতিহাস এর শুরু ১৯২০ এর দশক থেকে।

একদম গোড়ার দিকের গল্প 
তখন অবশ্য সারা পৃথিবীতেই  বিমান চলাচলের প্রথম যুগ । দমদম এ ১৯২০ এর দশক  থেকে প্লেন ওঠা নামা শুরু হয়ে গিয়েছিল । অবশ্য দমদম পাকা পাকি বিমানবন্দর হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে আরো পরে। প্রথমের ১৯২০ এর দশকে দমদম ছিল প্রায় একটা মাঠ।  সেই সময় রাডার দমদম এ এসেছিল বলে মনে হই না।  আকাশ থেকে দমদম এর এয়ার স্ট্রিপ দেখা বেশ কষ্টকর আর সেই অচেনা মাঠের ভিতর নামা টাও বিপদ্জন্নক ছিল। তাই কলকাতাতে নামতে  আসা বিমান বেশির বেশিরভাগ বিমান দম দম এর বদলে ময়দানে নামার চেস্টা করতো। আকাশ থেকে ময়দান সহজে দেখাও যেত তাই ময়দানে নামা সহজও ছিল। নিচের ছবিটা ১৯২৫ সালের ময়দানে নামা
ব্রিটিশ এয়ার ফোর্স এর একটা বিমান এর ছবি।



সেই থেকে শুরু হলো কলকাতা তে বিমান চলাচলের ইতিহাস। এবার ১৯২৯ (?) এর ঘটনা।  কলকাতার আকাশে প্লেন দেখা গেছে সেটাও একটা খবর।

ইম্পেরিয়াল এয়ারওয়েস (আজকের ব্রিটিশ এয়ারওয়েস) ১জুলাই ১৯৩৩ এ লন্ডন কলকাতা রুট সুরু করে দিল। রুট তা ছিল এই রকম - করাচি,যোধপুর,দিল্লি,কানপুর,এলাহাবাদ,কলকাতা। সেই বছরের ৯ ডিসেম্বর রুট চলে এলো সিঙ্গাপুর পর্যন্ত। তবে এই সব গুলি ছিল ডাক এর জন্য।

আমেলিয়া এআহার্ট 

প্রথম মহিলা যিনি প্লেন এ বিশ্ব পরিক্রমাকরার করার  চেস্টা  করেন। দমদম এ নামার খবর চার দিকে প্রিন্ট হয়েছিল।দুর্ভাগ্য যে এর ১৬ দিন পরে ১৯৩৭, ২ জুলাই এ উনি অতলান্তিক এর আকাশ এ চিরকালের মত হারিয়ে গেলেন। উইকিপেডিয়া পড়লে হারিয়ে যাবার নানা তত্ত্বের বিবরণ মিলবে। একটা তত্ত্বের কথা উইকিপেডিয়া কম বলেছে - সেটা হলো জাপানী রা প্লেন তাকে গুলি করে নামিয়েছে।  প্রমাণ নেই যদিও। ওয়ার্ল্ড ওয়ার এর আগের ঘটনা। তবুও নেতাজি এর হারিয়ে যাবার কথা মনে পরবেই। এর অনেক পরে এই সেদিন ১৯৯৭ সালে লিন্ডা ফ্লিন্চ কলকাতার উপর দিয়ে ওই একই রুট এ ওই একই প্লেন নিয়ে  গেলেন।


হল্লা চলেছে যুদ্ধ এ  - 
২য় বিশ্বযুদ্ধ এর সময়।  দমদম এর ইতিহাস আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এক নির্লিপ্ত যোগ। যুদ্ধ এর সময় দমদম এর গুরুত্ব খুব বেড়ে গিয়েছিল। তখন সুদুর প্রাচ্য এর লড়াই জোর কদমে চলছে।  সিঙ্গাপুর জাপানীদের হাতে চলে গিয়েছে। জাপানী সৈন্য চলে এসেছে ভারতের পূর্ব সীমান্ত পর্যন্ত। পুরো ব্রিটিশ সাম্রাজ্য এর পূর্ব দিকের শেষ বড় শহর হলো কলকাতা। পূর্বদিকে মিলিটারি সাপ্লাই লাইন এর সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ দুটো কেন্দ্র ছিল কলকাতার বন্দর আর দমদম বিমানবন্দর ।
ডিসেম্বর ২৪ ১৯৪২ এ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এ বেরিয়েছিল জাপানি বম্বিং প্লেন এর কলকাতার আকাশে হানার কথা।  মারা গিয়েছিল ২৫ জন।  যদিও ভিতরের কাগজ এ দেখছি আলাদা করেবলা হয়েছে শুধু এক মহিলা আর ২ বাচ্চার মৃত্যু সংবাদ।  বাকিদের উলেক্খ নেই কেন? হ্য়ত বাকি ক্ষতি ছিল মিলিটারি সৈনিকদের মৃত্যু। গোপনীয়তার কারণে সেই দিনের কাগজ ছাপায়  নি বাকিদের কথা।  সেই বছরেই জাপানিরা দখল করে নিয়েছে রেঙ্গুন আর আন্দামান।  তাই কলকাতার উপরে বিমান আক্রমণ ছিল অশনি সংকেত শুধু ব্রিটিশ দের জন্যই না, সারা ভারত আর মিত্রপক্ষের জন্যও। ২৪ তারিখ এর সেই কাগজে রয়েছে মার্কিন বিমান হানার কথা - পাল্টা সেই হানা হয়েছিল রেঙ্গুন এ।  সেই দিনেই জাপানি বিমান হানা হয়েছিল ফেনি আর চিটাগং এও।  সেই হানা বোধ হয় তেমন কার্যকরি হয় নি। কোনো ক্ষতি হয় নি কাগজে জোর দিয়ে বেরিয়েছিল ।  
২৬ ডিসেম্বর ১৯৪২ এর কাগজে রয়েছে বড়দিনের রাতের চতুর্থ  জাপানি হামলার কথা।  সেই দিনে লোক মারা যাবার কথা আর ছাপানো হয় নি।  মিলিটারি সেন্সর বোধ হয়।  তবে দাবি করা হয়েছে যে পাল্টা হানা তে একটা জাপানি বিমান ধ্বংস হয়েহে আর বাকি গুলোর ভালো ক্ষতি হয়েছে।
২৭ ডিসেম্বর ১৯৪২ এর কাগজে বের হলো নতুন নিয়ম এর কথা।  বিকাল ৪  টে  থেকে সকাল ৪ টে পর্যন্ত শতকার ক্রিয়ার সময় আলো জালানো বারণ হয়ে গেল। আলো  দেখে জাপানি বিমান ফ্যাক্টরি ভেবে যদি আক্রমণ করে !! 
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এ বাড়িয়েছিল তখন কার সেই দিনের আরো কিছু কথা।  শিয়ালদহ, হাওড়া তে ভিড় উপচে পড়ছিল কলকাতা থেকে পালাবার জন্য।  অবস্থা এমন হয়েছিল যে টিকিট বিক্রিতে কোটা করে দেয়াও হলো।  ধ্বংস হওয়া জাপানি বিমান দেখানো হলো সবাই কে যাতে আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে, বা বলা ভালো মিত্রশক্তির ওপরে বিশ্বাস ফিরে আসে। 


কলকাতার সেটা বড় বাজে সময়।  যুদ্ধ এর আঁচ বাড়ছে, খাবার নেই, দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়ছে, অর্থনীতির হাল না বলাই ভালো। কিন্তু সেই দিনের কাগজের লেখা পড়লে মনেই হবে না অবস্থা এত খারাপ।  পুরনো দিনের এই কাগজ দেখার সব থেকে বড় শিক্ষা বোধ হয় এটাই যে সত্যি কে প্রকট হতে দাও। 

জাপানিরা কলকাতা তে আক্রমণ করেছিল কেন সেই নিয়ে লন্ডন থেকে পাবলিশ হওয়া  দি এজ খবরের কাগজে বেশ বিস্তারিত আলোচনা বেরিয়েছিল।  এজ এর মতে জাপানি রা প্রথমে আশা করেছিল সুভাস চন্দ্র বোস কে সামনে রেখে লড়লে এক সময় সারা ভারত ব্রিটিশ বাহিনীর বিরূদ্ধে চলে যাবে।  সেটা ব্রিটিশ বাহিনীর সব থেকে বড় ক্ষতি - কারণ তখন লড়তে হবে একদিকে জাপানি দের বিরূদ্ধে অন্য দিকে ভারতীয় দের বিরূদ্ধেও।  তার উপরে ভারতীয় সৈন্য হাত ছাড়া হবে ব্রিটিশ দের। এই তিন মুখী চাপের ফাসে ব্রিটিশরা পড়লে জাপানিদের লড়াই তাই অনেক সোজা হয়ে যাবে। সেই জন্য ১ বছর পর্যন্ত জাপানি রা ভারত এর ভূখন্ডে কোনো আক্রমন ও করে নি। জাপান ভারত কে প্রতিশ্রুতি ও দিয়েছিল যে কোনো  আক্রমন হবে না।  এক বছর পার হলেও যখন ভারত ব্রিটিশ সৈন্যর বিরুদ্ধে  গেল না , তখন জাপানি রা কিছু টা হতাশা থেকেই আক্রমণ করে। আর একটা বাখ্যা হলো, আস্তে আস্তে যখন মার্কিন চাপ বাড়ছিল জাপানি পশ্চিম দিকের লাইন এর উপরে, জাপান কিছু টা বাধ্য হয়ে ব্রিটিশ-মার্কিন সাপ্লাই লাইন এ বিঘ্ন ঘটানোর জন্য এই কলকাতার উপরে বিমান হানা করে। এই জাপানি বিমান হানা বেশি দিন স্থায়ী হয় নি।  মার্কিন বিমান বহর অনেক বেশি বড় আর আধুনিক ছিল জাপানি দের তুলনা তে। এই অসম লড়াই এর জন্য জাপানি আক্রমণ আস্তে আস্তে একসময় শেষ হয়ে গেল। 

২য়  বিশ্বযুদ্ধ এর সময় জাপানি প্লেন আক্রমণ এর ভয় ছিল। রেড রোড হয়ে গিয়েছিল কিছু দিনের রানওয়ে। সেই রেড রোড রানওয়ে যখন আবার সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হলো তখন সেই খবর কিন্তু পৃথিবীর অনেক নিউসপেপারই ছাপিয়েছিল। সত্যিই  তো।  এটা একটা স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসার খবর।  যুদ্ধ এর সময় তার গুরুত্ব কম ছিল না।  

এই বিমান চলাচলের মধ্যেই ঘটে যেত দুর্ঘটনা - সব থেকে আগের যে দুর্ঘটনা এর খবর পাচ্ছি সেটা ঘটেছিল ১৯৪৩ তে।  একটা আর্মি ট্রান্স পোর্ট প্লেন দাড়িয়ে থাকা প্লেন এ ধাক্কা মারে।

আর একটা বছর পার করে ১৯৪৪ এ এলাম ।  ১৯৪৪ সালের কলকাতাতে (এই বার কিন্তু দমদম এই) নামা চীনের একটা বিমান এর ছবি।

জাপানি হানার ফলে দমদম এর গুরুত্ব আরো বেড়ে গেল। পাল্টা হানার মূল কেন্দ্র হলো দমদম। আমেরিকার বিখ্যাত ১২ এয়ার ফোর্স এর ঘাটি হলো খড়গপুর। আরো ৩-৪ নতুন এয়ার স্ট্রিপ খোলা হলো। মিলিটারি অভিযানে দমদম এর উপরে নির্ভরতা কমল। তবে যুদ্ধ ও তো শেষ হয়ে আসছিল। 
উপরের ছবি - দেখাচ্ছে এই নতুন এয়ার স্ট্রিপ তৈরির কাজের গতি 



যুদ্ধ শেষ হয়ে এলো  

যুদ্ধ এক সময় শেষ হলো। যুদ্ধ শেষ হবার পরেও দমদম এর দরকার শেষ হোলো না । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধতে যদি ভালো কিছু হয়ে থাকে তা হলো বিমান ব্যবস্থার উন্নতি। বিশ্বযুদ্ধ শেষ এর পরেই জোয়ার এলো যাত্রীবাহী বিমান পরিবহণের। দমদম আস্তে আস্তে হয়ে উঠলো যাত্রীবাহী বিমান পরিবহণের গুরুত্ত্বপূর্ণ একটা বিমানবন্দর। প্যান এম, ব্রিটিশ এয়ার আরো কত আন্তর্জাতিক বিমান উড়ত তখন দমদম থেকে।

ইউরোপ আর পূর্ব এশিয়া এর ভিতর যোগাযোগ পথের ওপরে থাকার জন্য দমদমে প্লেন আসার বিরাম হয়নি।  প্লেনকে তেল ভরতে আজকের থেকে অনেক বেশি। বিমানের গতিও ছিল কম।  তা ছাড়া বিমান খুব বেশি উচু দিয়ে যেতে পারত না।  তাই সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ব্যাংকক, অস্ট্রেলিয়া এই সব জায়গা থেকে ইউরোপ এ যেতে গেলে কলকাতাতে নামার দরকার হত।  তা ছাড়া কলকাতা তখন ছিল ভারত এর প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র। মোটা টাকার টিকিট কেটে যাবার মতো  লোক ছিল।  পরে পরিস্থিতি পাল্টে গেল।

দমদমএ  কিন্তু খুব মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রায় ভুলে গেছি আমরা এই দুর্ঘটনা গুলো। প্রথমে দেখে নেবো কি কি ঘটনা ঘটেছে দমদম কে নিয়ে - না ঘটনা বলা যাবে না দুর্ঘটনাই এই গুলো। এভিয়েশন সেফটি  এর ওয়েব সাইট এ বিস্তারিত লিস্ট রয়েছে।
http://aviation-safety.net/database/airport/airport.php?id=CCU1#dep

কলকাতার সব থেকে বড় বিমান দুর্ঘটনা। সেটা ভুল। ৩ মে ১৯৫৩। আরো বড় দুর্ঘটনা।

৪৩ জন মারা গিয়েছিল সেই সিঙ্গাপুর -লন্ডন ফ্লাইট এ।  এটাই যেহেতু সব থেকে বড় দুর্ঘটনা, আমার লেখার জিনিস ও একটু বেশি।


মাত্র ১০০০০ ফুট উপর দিয়ে যাচ্ছিল এই প্লেন টা। কালবৈশাখী তে শেষ। অবাক হতে হয় টেকনোলজি এর এগিয়ে চলা দেখে।  এখন এই প্লেন গুলো ৪০০০০ ফুট এর উপর দিয়ে চলে। এই প্লেন টার যাবার কথা ছিল কলকাতা থেকে দিল্লি , তার পর লন্ডন। এটা B.O.A.C এর কমেট প্লেন। B.O.A.C পরে ব্রিটিশ এয়ারওয়েস এর সাথে এক হয়ে যাবে। এই রুট টা ছিল পৃথিবীর প্রথম একটা কমার্শিয়াল এয়ার রুট। কমেট এয়ার ক্রাফট ছিল পৃথিবীর প্রথম কমার্শিয়াল এয়ার ক্রাফট।
এর আগে সিঙ্গাপুর-লন্ডন ফ্লাইট ছিল ২ দিন আর ১২ ঘন্টার। এই নতুন কমেট এয়ার ক্রাফট সেই দূরত্ত কমিয়ে করেছিল মাত্র ৩৬ ঘন্টার। দূর প্রাচ্যের এটাই ছিল প্রথম  B.O.A.C কমার্শিয়াল রুট।

তাই এই দূর্ঘটনা বেশ ঐতিহাসিক। প্রথমে ধরে নেওয়া হয়েছিল যে দূর্ঘটনা এর কারণ খারাপ আকাশ আর পাইলট এর ভুল।  পরে, অনেক পরে ধরা পরে যে কমেট এর ডিজাইন এই ক্রুটি ছিল। দমদম এর দুর্ঘটনা কমেট প্লেন এর কফিন এর একটা পেরেক।

সেই দুর্ঘটনা টা বেরিয়েছিল অনেক গুলো কাগজে। দেশ, বিদেশ এর অনেক কাগজ এর প্রথম পাতার খবর ছিল।  ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ছাপিয়েছিল প্রথম পাতার প্রথম খবর হিসাবে।
না, ফ্লাইট টা তে কোনো মিত্র, ব্যানার্জী ,চ্যাটার্জী  বা মুখার্জী ছিলেন না। কোনো ভারতীয় ছিলেন না সেই দিনের ফ্লাইট এ। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস কলকাতা থেকে কারা উঠেছিলেন তাদের তালিকা  দিয়েছিল। তাতে দেখছি ১০ জনের নাম। সবই  ইউরোপিয়ান নাম।  বেশ বোঝা যায় স্বাধীনতার ৭ বছর পরেও কলকাতা তে ছিলেন অনেক ইউরোপিয়ান। এই কমার্শিয়াল রুট গুলো দমদম থেকে যে চলত হয়ত এই ইউরোপিয়ান দের জন্যই।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলছে যে প্লেন এর টুকরো মিলেছে প্রায় ৬২ মাইল জায়গা ধরে। প্রায় মুর্শিদাবাদ এর কাছে ও মিলেছে প্লেন এর ধ্বংস হবার চিহ্ন। বিকাল বেলাতে প্লেন ছেড়েছিল প্রায় ৪-৩০ নাগাদ। ২ ঘন্টা ২০ মিনিট লাগত দিল্লি যেতে।রাত ৯-৩০ পর্যন্ত দিল্লিতে প্লেন না আসাতে শেষ পর্যন্ত শুরু হলো খোঁজাখুজি।

সেই দিনের আনন্দবাজার দেখতে পেলে ভালো হত।  ইংরাজি কাগজ গুলো খবর ছাপালেও ছবি কিছু দেয় নি। আনন্দবাজার, বসুমতি , যুগান্তর এর পাতা তে ছবি না থাকাটাই হবে অবাক হবার মতো।

প্রথম দিনের দুর্ঘটনা এর খবর কিন্তু পরের দিনেই চলে গেল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এর দ্বিতীয় পাতার একটা কোণে। পরের দিনের খবরে দেখা যাচ্ছে একটা তদন্ত দল  তৈরী হচ্ছে। ব্রিটিশ নিউসপেপার কি বলছে তাও দিয়েছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

দা টেলিগ্রাফ বলছে দুর্ঘটনা হলেও কমেট চালিয়ে যাওয়া উচিত। কমেট মানুষের উন্নতির একটা চিহ্ন। বিমান দুর্ঘটনায় সিঙ্গাপুর  স্টক এক্সচেঞ্জ এর ৪ জন মারা গিয়েছিলেন। তাঁদের স্মৃতিতে ৪ মে সিঙ্গাপুর স্টক এক্সচেঞ্জ ও অর্ধেক দিন বন্ধ ছিল।

পরের দিনের কাগজে বেরিয়েছিল একটা ১৪ বছরের ছেলের দুর্ঘটনা দেখার বিবরণ। খুব বৃষ্টি হচ্ছিলো, সেই সঙ্গে কালবৈশাখী এর প্রবল ঝড়। আচমকা একটা আগুনের গোলা নেমে এলো সবুজ আমবাগানের উপর দিয়ে। পড়ল গিয়ে কাদা মাখা মাঠের ভিতর। তখনও আজকের মতো উদ্ধার এর ব্যবস্থা থাকলে হয়তো কিছু লোকের প্রাণ রক্ষা হতো। গ্রামের মানুষ চেষ্টা করেছিল কাদা ছুড়ে ছুড়ে আগুন বন্ধ করার। তা কি আর হয় !! সেই দুর্ঘটনা তে দমকল এসেছিল প্রায় ২৪ ঘন্টা পরে। তখন সব কিছু জ্ব্বলে খাক।

তার পরের দিনের ৬ই মে এর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এ বাংলা খবর বলতে দুটো  - কলকাতার অ্যাসেম্বলি তে মোশন পাশ হয়েছে বিহার এ অফিসিয়াল ভাষা এর ভিতরে বাংলা অন্তর্ভুক্তির দাবীতে ! দ্বিতীয় খবর হলো নেতাজীর ফেলে যাওয়া টাকা উধ্হার এর দাবীতে ! সত্যি নেতাজি আজাদ হিন্দ এর জন্য অনেক টাকা রেখে গিয়েছিলেন  - কোথায় গেল সেই টাকা !! ফিরে আসা যাক দমদম এ।
কমেট এর সেই দুর্ঘটনার বিস্তারিত অনুসন্ধাণ হয়েছিল। ইন্টারনেট এ পাবো সেই রিপোর্টও। রিপোর্ট টা সুন্দর , সহজ ভাষায় লেখা, সুন্দর করে ভাগ ভাগ করে বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে।
http://lessonslearned.faa.gov/Comet1/G-ALYV_Report.pdf

রিপোর্ট এ বলছে সেই প্লেন এর প্রধাণ ধ্বংস।বশেষ মিলেছিল দমদম থেকে ২৪ কিলোমিটার দুরে একটা নালা তে।  এ ছাড়াও সেই ৩১ পাতার বিস্তারিত রিপোর্ট এ রয়েছে ম্যাপ, যাত্রী দের নাম, প্লেন এর দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ। ম্যাপ দেখে মনে হচ্ছে আজকের সন্তোষপুর এর কাছে থেকেই প্লেন এর টুকরো পাওয়া গিয়েছিল। এই রিপোর্ট এ আরো মিলবে পাইলট এর এক্সপেরিয়েন্স রেকর্ড।

 তবে দমদমে বিমান দুর্ঘটনা আরো আছে।  ১৯৫১ সালের ২২ নভেম্বর।  শীত পড়ছে। কলকাতা তে আজকের মত সেদিনও হত কুয়াশা।  ১৭ জন যাত্রী নিয়ে পাইলট দমদম এ নামতে গিয়ে ভুল করে নামল মানিকতলাতে। মানিকতলা তখন গ্রাম। প্লেন গ্রামের মাঠে গিয়ে ধাক্কা খেল। একজন যাত্রী ছাড়া সবাই মারা গেল। 
১৯৫১, ২২ নভেম্বর 



এই সব ঘটনাগুলোই বিমান দুর্ঘটনা। একটা জিনিস সব কটা ঘটনা কে যোগ করে রেখেছে - সব গুলোই দমদম বিমানবন্দর বা দমদম এর চার পাশে ঘটা। এই লিস্ট এর কিছু কিছু নিয়েই আলোচনা করা যাক। তখনকার কাগজ কি কি বলেছে তা দেখি।  আর সেই পুরনো কাগজ উল্টাতে উল্টাতে চলে যাবো হয়ত অন্য দিকে।
জুন ১২, ১৯৬৮। এই প্লেন তা আসছিল ব্যাংকক থেকে। এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার  এর কথা ঠিক বুঝতে পারে নি। প্লেন দমদম এ নামার  ঠিক আগে ধাক্কা  মারে একটা গাছে।


হতে পারে কৈলাস এ কেলেঙ্কারী গল্পের শুরুতে যে প্লেন দুর্ঘটনা হয়েছিল সেটা এটার্ ওপরেই। 
এর ২ বছর পরের  ঘটনা। এই টা বোধ হই দমদম এর কাছে ঘটা শেষ দুর্ঘটনা। ভগবান এর দয়া তে এটাই যেন শেষ। রাশিয়ান প্লেন আসছিল ঢাকা থেকে।  সাইক্লোন হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তান এ এর কিছু দিন আগেই। রাশিয়ান প্লেন সেই সাইক্লোন এর রিলিফ পৌঁছাতে গিয়েছিল। আগুন ধরে গিয়েছিল। এই প্লেন টা শেষ চেস্টা করেছিল পানাগড় এ নামার। দুর্ভাগ্য। শেষ রক্ষা হলো না। ১৭ জন যাত্রী বাঁচেন নি একজনও। 

     ডিসেম্বর ১৯, ১৯৭০

প্লেন দুর্ঘটনা এর এই শেষ।  আর ২-৩ পয়েন্ট বলে শেষ করব।  

দমদমের হাইজ্যেকের ইতিহাস 

এমনকি হাইজ্যাক ও দেখেছে দমদম।  
২ তো ঘটনার কথা পড়তে পারলাম।দুটি ঘটনায় আনন্দ সংবাদ।  হাইজ্যাকরা এখানেই  আত্মসমর্পণ করেছিল। যদিও এই হাইজ্যাকরা নিতান্ত নিরীহ , তবুও ইতিহাস বলবে দমদম এর কর্মীরা সামলেছেন ভালো ।  



১৯৭৭ (?)                                                    ১৯৯১ (?) - এত পরের ঘটনা কিন্তু আমার কিছু মনে নেই।

রবীন্দ্রনাথ ও দমদম  

শুরুতেই তো বলেছিলাম একটা ঘরে কবিগুরু ও আছেন।  এত ক্ষণ তো গেল নানা দুর্ঘটনার কথা দিয়ে। সেই সময় বিমান চড়ার অভিজ্ঞতা বোঝাতে গেলে আবার রবীন্দ্রনাথ এর ই কাছে যেতে হবে।  গুরুদেব ১৯৩১ এ দমদম থেকে গেলেন ইরান এ। পারস্যর চিঠি তে সেই বিমান চড়ার যে অভিজ্ঞতা র ছবি ফুটে ওঠে তার এর থেকে ভালো বিবরণ আর কথাও দেখি নি। পারস্যর চিঠি র কিছু টা তুলে ধরা প্রাসঙ্গিক হবে।  অসাধারণ ভাষা ছাড়াও খেয়াল করার জিনিস হলো রবীন্দ্রনাথ বেশ বিস্তারিত ভাবে লিখেছেন কি ভাবে হতো তখন কার বিমান যাত্রা গুলো।

রেলের পথ এবং পারস্য উপসাগর সেই গরমের সময় আমার উপযোগী হবে না বলে ওলন্দাজদের বায়ুপথের ডাকযোগে যাওয়াই স্থির হল।  ....
পূর্বে আর-একবার এই পথের পরিচয় পেয়েছিলুম লণ্ডন  থেকে প্যারিসে। কিন্তু সেখানে যে ধরাতল ছেড়ে উর্ধ্বে উঠেছিলুম তার সঙ্গে আমার বন্ধন ছিল আলগা। তার জল-স্থল আমাকে পিছুডাক দেয় না, তাই নোঙর তুলতে টানাটানি করতে হয় নি। এবারে বাংলাদেশের মাটির টান কাটিয়ে নিজেকে শূন্যে ভাসান দিলুম, হৃদয় সেটা অনুভব করলে।
কলকাতার বাহিরের পল্লীগ্রাম থেকে যখন বেরলুম তখন ভোরবেলা। তারাখচিত নিস্তব্ধ অন্ধকারের নীচে দিয়ে গঙ্গার স্রোত ছলছল করছে। বাগানের প্রাচীরের গায়ে সুপুরিগাছের ডাল দুলছে বাতাসে, লতাপাতা-ঝোপঝাপের বিমিশ্র নিশ্বাসে একটা শ্যামলতার গন্ধ আকাশে ঘনীভূত। .....
গলির মোড়ে নিষুপ্ত বারান্দায় খাটিয়া-পাতা পুলিস-থানার পাশ দিয়ে মোটর পৌঁছল বড়ো রাস্তায়। অমনি নতুন কালের কড়া গন্ধ মেলে ধুলো জেগে উঠল, গাড়ির পেট্রোল-বাষ্পের সঙ্গে তার সগোত্র আত্মীয়তা। ....
দমদমে উড়ো জাহাজের আড্ডা ঐ দেখা যায়। প্রকাণ্ড তার কোটর থেকে বিজলি বাতির আলো বিচ্ছুরিত। তখনো রয়েছে বৃহৎ মাঠজোড়া অন্ধকার। সেই প্রদোষের অষ্পষ্টতায় ছায়াশরীরীর মতো বন্ধুবান্ধব ও সংবাদপত্রের দূত জমে উঠতে লাগল। সময় হয়ে এল। ডানা ঘুরিয়ে, ধুলো উড়িয়ে, হাওয়া আলোড়িত করে ঘর্ঘর গর্জনে যন্ত্রপক্ষীরাজ তার গহ্বর থেকে বেরিয়ে পড়ল খোলা মাঠে। আমি, বউমা, অমিয় উপরে চড়ে বসলুম।  ঢাকা রথ, দুই সারে তিনটে করে চামড়ার দোলা-ওয়ালা ছয়টি প্রশস্ত কেদারা, আর  পায়ের কাছে আমাদের পথে-ব্যবহার্য সামগ্রীর হালকা বাক্স। পাশে কাঁচের জানলা।
ব্যোমতরী বাংলাদেশের উপর দিয়ে যতক্ষণ চলল ততক্ষণ ছিল মাটির কতকটা কাছাকাছি। পানাপুকুরের চারি ধারে সংসক্ত গ্রামগুলি ধূসর বিস্তীর্ণ মাঠের মাঝে মাঝে ছোটো ছোটো দ্বীপের মতো খণ্ড খণ্ড চোখে পড়ে। উপর থেকে তাদের ছায়াঘনিষ্ঠ শ্যামল মূর্তি দেখা যায় ছাড়া-ছাড়া, কিন্তু বেশ বুঝতে পারি আসন্ন গ্রীষ্মে সমস্ত তৃষাসন্তপ্ত দেশের রসনা আজ শুষ্ক। নির্মল নিরাময় জলগণ্ডুষের জন্য ইন্দ্রদেবের খেয়ালের উপর ছাড়া আর-কারো 'পরে এই বহু কোটি লোকের  যথোচিত ভরসা নেই।
মানুষ পশু পাখি কিছু যে পৃথিবীতে আছে সে আর লক্ষ্য হয় না। শব্দ নেই, গতি নেই, প্রাণ নেই; যেন জীববিধাতার পরিত্যক্ত পৃথিবী তালি-দেওয়া চাদরে ঢাকা। যত উপরে উঠছে ততই পৃথিবীর রূপবৈচিত্র্য কতকগুলি আঁচড়ে এসে ঠেকল। বিস্মৃতনামা প্রাচীন সভ্যতার স্মৃতিলিপি যেন অজ্ঞাত অক্ষরে কোনো মৃতদেশের প্রান্তর জুড়ে খোদিত হয়ে পড়ে আছে; তার রেখা দেখা যায়, অর্থ বোঝা যায় না।
প্রায় দশটা। এলাহাবাদের কাছাকাছি এসে বায়ুযান নামবার মুখে ঝুঁকল। ডাইনের জানলা দিয়ে দেখি নীচে কিছুই নেই, শুধু অতল নীলিমা, বাঁ দিকে আড় হয়ে উপরে উঠে আসছে ভূমিতলটা। খেচর-রথ মাটিতে ঠেকল এসে; এখানে সে চলে লাফাতে লাফাতে, ধাক্কা খেতে খেতে; অপ্রসন্ন পৃথিবীর সম্মতি সে পায় না যেন।
শহর থেকে জায়গাটা দূরে। চার দিকে ধূ ধূ করছে। রৌদ্রতপ্ত বিরস পৃথিবী। নামবার ইচ্ছা হল না। কোম্পানির একজন ভারতীয় ও একজন ইংরেজ কর্মচারী আমার ফোটো তুলে নিলে। ......
এইখানে যন্ত্রটা পেট ভরে তৈল পান করে নিলে। আধঘন্টা থেমে আবার আকাশযাত্রা শুরু। এতক্ষণ পর্যন্ত রথের নাড়া তেমন অনুভব করি নি, ছিল কেবল তার পাখার দুঃসহ গর্জন। দুই কানে তুলো লাগিয়ে জানলা দিয়ে চেয়ে দেখছিলুম। সামনের কেদারায় ছিলেন একজন দিনেমার, ইনি ম্যানিলা দ্বীপে আখের খেতের তদারক করেন, এখন চলেছেন স্বদেশে।.... যাত্রীদের মধ্যে আলাপের সম্বন্ধ রইল না। যন্ত্রহুংকারের তুফানে কথাবার্তা যায় তলিয়ে। এক কোণে বেতারবার্তিক কানে ঠুলি লাগিয়ে কখনো কাজে কখনো ঘুমে কখনো পাঠে মগ্ন। বাকি তিনজন পালাক্রমে তরী-চালনায় নিযুক্ত, মাঝে মাঝে যাত্রার দফ্‌তর লেখা, কিছু-বা আহার, কিছু-বা তন্দ্রা। ক্ষুদ্র এক টুকরো সজনতা  নীচের পৃথিবী থেকে ছিটকে পড়ে উড়ে চলেছে অসীম জনশূন্যতায়।
জাহাজ ক্রমে উর্ধ্বতর আকাশে চড়ছে, হাওয়া চঞ্চল, তরী টলোমলো। ক্রমে বেশ একটু শীত করে এল। নীচে পাথুরে পৃথিবী, রাজপুতানার কঠিন বন্ধুরতা শুষ্ক স্রোতঃপথের শীর্ণ রেখাজালে অঙ্কিত, যেন গেরুয়া-পরা বিধবাভূমির নির্জলা একাদশীর চেহারা। 

অবশেষে অপরাহ্নে দূর থেকে দেখা গেল রুক্ষ মরুভূমির পাংশুল বক্ষে যোধপুর শহর। আর তারই প্রান্তরে যন্ত্রপাখির হাঁ-করা প্রকাণ্ড নীড়। নেমে দেখি এখানকার সচিব কুন্‌বার মহারাজ সিং সস্ত্রীক আমাদের অভ্যর্থনার জন্য উপস্থিত, তখনই নিয়ে যাবেন তাঁদের ওখানে চা-জলযোগের আমন্ত্রণে। শরীরের তখন প্রাণধারণের উপযুক্ত শক্তি কিছু ছিল, কিন্তু সামাজিকতার উপযোগী উদ্‌বৃত্ত ছিল না বললেই হয়। কষ্টে কর্তব্য সেরে হোটেলে এলুম।
হোটেলটি বায়ুতরীযাত্রীর জন্যে মহারাজের প্রতিষ্ঠিত। সন্ধ্যাবেলায় তিনি দেখা করতে এলেন। তাঁর সহজ সৌজন্য রাজোচিত। মহারাজ স্বয়ং উড়োজাহাজ-চালনায় সুদক্ষ। তার যতরকম দুঃসাহসী কৌশল আছে প্রায় সমস্তই তাঁর অভ্যস্ত!

পরের দিন ১২ই এপ্রেল ভোর রাত্রে জাহাজে উঠতে হল। হাওয়ার গতিক পূর্বদিনের চেয়ে ভালোই। অপেক্ষাকৃত সুস্থ শরীরে মধ্যাহ্নে করাচিতে পুরবাসীদের আদর-অভ্যর্থনার মধ্যে গিয়ে পৌঁছনো গেল। সেখানে বাঙালি গৃহলক্ষ্মীর সযত্নপক্ক অন্ন ভোগ করে আধ ঘন্টার মধ্যে জাহাজে উঠে পড়লুম। 

সমুদ্রের ধার দিয়ে উড়ছে জাহাজ। ..... এইবার মরুদ্বার দিয়ে পারস্যে প্রবেশ। বুশেয়ার থেকে সেখানকার গবর্নর বেতারে দূরলিপিযোগে অভ্যর্থনা পাঠিয়েছেন। করাচি থেকে অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যোমতরী জাস্কে পৌঁছল। সমুদ্রতীরে মরুভূমিতে এই সামান্য গ্রামটি। কাদায় তৈরি গোটাকতক চৌকো চ্যাপটা-ছাদের ছোটো ছোটো বাড়ি ইতস্ততবিক্ষিপ্ত, যেন মাটির সিন্দুক।

রবীন্দ্রনাথ এর প্রথম বিমান  চড়ার (১৬ এপ্রিল ১৯২১ লন্ডন থেকে পারি) অভিজ্ঞতা জানা যায় কবিগুরুর ১৭ই এপ্রিল ১৯২১ এর এক চিঠি থেকে
Dear friend, my short career in the sky was unobscured by cloud and luminous with the April sunshine.The only thing to which I could take objection was the deafening noise which followed me from shore to shore and made me glad to be back t the earth again where one has the choice of diluting all noise with silence as much as it is available.

১৯২১ এর সেই বিমান যাত্রা এর সাথে দম দম এর কোনো সম্পর্ক নেই।  তবুও করিগুরু এর প্রথম বিমান যাত্রা এর সম্পর্কে আর একটা কথা বলে নি - সেই দিনের সেই যাত্রার সাথী ছিলেন গগনেন্দ্র নাথ।  শিল্পী রবীন্দ্রনাথ কে বিমান এ দেখে যে কার্টুন একেছিলেন সেটা এই এই খানে দিলাম।  রবীন্দ্রনাথ আকাশ এর তারার ভিতর, চেয়ার এ চেপে উড়ে চলেছেন, হাওয়া তে উড়ছে দাড়ি !!

শেষের কিছু কথা - হাজারদুয়ারীর আনাচে কানাচে 

একদম শেষ করার আগে দিয়ে যাই কিছু দরকারী কথা। আরো পাতা উড়ে আসুক অতীত এর অন্ধকার থেকে - নতুন আলো পড়ুক দমদম এর রানওয়ে তে।
ফ্লাইট গ্লোবাল ওয়েব সাইট এ দুর্দান্ত আর্কাইভ রয়েছে। কলকাতা দিয়ে সার্চ করলেই মিলবে ফ্লাইট ইন্টারন্যাশনাল এর পুরনো সংখ্যা। নানা খবর রয়েছে সেই সংখ্যা গুলোতে যার ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে - যেমন ধরুন এই নিচের খবর টা।
ল্যাঙ্কাশায়ার বিমান কর্পোরেশন কলকাতা তে একটা চার্টার ফ্লাইট চালাচ্ছেন।  কোম্পানির জাহাজ কলকাতায় অসহায় ভাবে আটকে রয়েছে এবং কোম্পানীর  দিনে 200 পাউন্ড করে ক্ষতি হচ্ছে। অপারেশন খুবই তাড়াতাড়ি করতে হবে। তাই দশ জনের একটা দল বিমানের সাথে যাচ্ছে যাতে ক্রমাগত উড়ন্ত সম্ভব হবে। বিমান চলবে ৩৭ ঘন্টা (ফ্লাইং টাইম ৩০-৩১ ঘন্টা).
http://www.flightglobal.com/pdfarchive/search.aspx?ArchiveSearchForm%24search=dumdum&ArchiveSearchForm%24fromYear=1941&ArchiveSearchForm%24toYear=1945&x=25&y=8

কলকাতা তে ব্রিটিশ এভিয়েশন ইন্সুরেন্স কোম্পানি এর অফিস  ছিল। নিচের বিজ্ঞাপণ এ দেখা যাচ্ছে ব্রিটিশ রাজের কাছে তখনো কলকাতা ছিল দিল্লি বা অন্য জায়গার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

ডগলাস এয়ার ক্রুজার এর কলকাতা নামার সাধারণ ছবি রয়েছে ক্রিটিকাল পাস্ট ওয়েব সাইট এ
http://www.criticalpast.com/video/65675071961_Douglas-World-Cruiser_Indians_harbor-scene_cruiser-is-lifted



কলকাতার নামে ছিল প্লেন ও। দারুণ একটা ভিডিও রয়েছে ইউ টিউব এ।
















শেষ করি ব্রিটিশ পাথে এর ১৯৪৯ এর একটা ভিডিও দিয়ে। নেহেরু এর কলকাতা আসার ছবি।  প্রথম ১ মিনিট হলো দমদম এর ছবি।