Saturday, 14 March 2015

ভারতীয় অবদান - কাম্বোডিয়া

ভারতীয় অবদান দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া এই সব অঞ্চলের উপরে অনস্বীকার্য।  তবে ভারতের অনেকের ভিতরে ধারণা আছে যে ভারত থেকে লোকে গিয়ে এই অঞ্চল গুলো দখল করেছিল। সেটা একদমই ভুল।

ভারতের প্রধান প্রভাব ছিল ধর্ম , সংস্কৃতি, বাণিজ্য , সেচ , বিজ্ঞান এর নানা দিকে। বৌদ্ধ, হিন্দু  এই দুটো প্রধান ধর্ম ছড়িয়ে পড়েছিল দক্ষিণ এশিয়া তে। আসলে ভারত থেকে কিছু লোক এসে প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। ঠিক করা ছিলেন এই বিশিষ্ট জনরা ? আজ আর ঠিক বলা যাবে না। তবে এরা ছিলেন প্রধানত ব্রাহ্মণ। একই সাথে পন্ডিত নানা জায়গাতে গণিত থেকে দর্শন।  এরাই পরামর্শ দিতেন স্থানীয় রাজাদের পররাষ্ট থেকে নানা বিষয়ে।  কি করে এরা ভারত থেকে এত দূরে গেলেন , আজকে বলা মুশকিল লিখিত ইতিহাসের অভাবে।

প্রায় ১০০০ বছর ধরে চলা ভারতের এই প্রভাব বিস্তার এর ইতিহাস একটা অসাধারণ ইতিহাস।  এই দক্ষিণ এশিয়া এর অঞ্চল গুলো কিন্তু ভারতের সব কিছু একে বারে গ্রহণ করে নি।  যেমন ধরুন, আমাদের বর্ণ প্রথা।  ভারতের প্রভাব থাকা সত্বেও বর্ণ প্রথা কিন্তু দক্ষিণ এশিয়া এর কথাও ছড়িয়ে পরে নি।  সত্যি কথা বর্ণ প্রথা। ভারতের বাইরে কোথাও তেমন যায় নি।  যদিও ভারতের ধর্ম এবং জ্ঞান আরো অনেক অঞ্চলের উপরে অসাধারণ প্রভাব ফেলেছিল। হয়তো সেই কারণে দক্ষিণ এশিয়া এর দেশ এর মানুষ  পরের দিকে মুসলিম ধর্মে চলে গেলেন।  ঠিক তেমনি দক্ষিণ এশিয়া এর মন্দির এর গরনেরও ভারতীয় প্রভাব থাকলেও নিজের স্থানীয় শিল্পের ছাপ আপনি কিছুতেই মিস করতে পারবেন না।


আগের ছবি টা বালি তে তোলা। রাম, সীতার মূর্তি। রামায়ণ এবং মহাভারত জাভা তে স্থানীয় ভাষাতে অনূদিত হয়েছিল।
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া এর দেশ গুলোর অর্থনীতি, ব্যবসায়, স্থাপত্য, সংস্কৃতি সব কিছুর ওপরে চীন এর প্রভাব রয়েছে। ঠিক তেমন-ই রয়েছে ভারতের প্রভাব। একমাত্র ব্যতিক্রম হলো ভিয়েতনাম। ভিয়েতনাম দীর্ঘদিন চীন এর অধীন-এই ছিল, ৯২৯ খ্রীস্টাব্দ এর কাছাকাছি চীন ভিয়েতনাম এর দখল হারায়। ভিয়েতনাম এর ওপরে ভারতের ছাপ কিছুই নেই, ভারত - ভিয়েতনাম এর আদান প্রদান সব-ই বর্তমান যুগের।

আধুনিক ভিয়েতনাম এর ঠিক পাশেই কাম্বোডিয়া। কাম্বোডিয়া এর অ্যাংকর ভাট বানানো শুরু হয় ৯০০ খ্রীস্টাব্দ এর কাছাকাছি। প্রধান মন্দির কমপ্লেক্স তৈরী হয়েছিল ৪০ বছরের ভিতর। অ্যাংকর এর উপরে ভারতীয় ছাপ সর্বত্র। রাজা সূর্যবর্মণ এর সময় তৈরী শুরু হলো এই মন্দির। রাজার নাম তো আজকের ত্রিপুরার কোনো রাজা বলে দিব্বি চালিয়ে দেওয়া যায়। তবে ভারতের অবদান কাম্বোডিয়া এর অ্যাংকর ভাট এ শুধু শেষ হয়ে যায় না। এক সময় কাম্বোডিয়া এর নিয়ন্ত্রণ ছিলো আজকের থাইল্যান্ড এর উপরেও। কাম্বোডিয়া কিন্তু শ্রী বিজয়ার মতো ট্রেডিং নেশন ছিল না। কাম্বোডিয়া এর অর্থনীতির প্রধান জোর ছিল কৃষি উৎপাদন। কাম্বোডিয়া বছরের ৩-৪ মাস বন্যার জলে প্লাবিত থাকে। তার পরে, বর্ষার সময় শেষ হলেই একটা দীর্ঘ শুকনো সময়।
                          
কাম্বোডিয়া এর গোল্ডেন টাইম ধরতে গেলে ৮০০ থেকে ১৩০০ খ্রীস্টাব্দ। সেই একই সময় কাম্বোডিয়া এর অসাধারণ উন্নতি হয় খাল এবং সেচ ব্যবস্থা এর। যার ফল হলো অভূতপূর্ব কৃষি সমৃদ্ধি। আসতে আসতে না না কারণে কাম্বোডিয়া এর অর্থনীতির জোর কমে যায়। তার ফলে থাইল্যান্ড থেকে ক্রমাগত আক্রমণ হতে থাকে। একটা সময় গিয়ে কাম্বোডিয়া এর এই খাল এবং সেচ ব্যবস্থা পুরো নষ্ট হয়ে যায়। খাল গুলো ম্যালেরিয়া এর মশার আস্তানা হয়। পরের দিকে ১৪০০ সাল নাগাদ কাম্বোডিয়া এর বিস্তীর্ণ অঞ্চল এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। মনে রাখতে হবে সেই যুগে এই সব রোগের কোনো চিকিৎসা ছিল না। তাই একমাত্র রাস্তা ছিল অন্য জায়গাতে চলে যাওয়া। কাম্বোডিয়া এর ক্ষমতা চলে যাবার সাথে সাথে আজকের থাইল্যান্ড অঞ্চলের ক্ষমতা বাড়তে থাকে। থাইল্যান্ড কম্বোডিয়া এর ভারতীয় ছাপ কে নিজের মত করে গ্রহণ করে পাল্টে নিল।

দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া এর এই যুগ এর ইতিহাস এর একটা জোর বদল এলো ১৪০০ সাল এর কাছাকাছি। আমরা চলে এলাম প্রায় মালাক্কা এর পর্তুগিজ ইতিহাস এর কাছে।

No comments:

Post a Comment