Saturday, 10 January 2015

স্বাধীনতার পথে ১০ ঝড়ো বছর: হেডলাইনে ইতিহাসের ঝলক | Headlines that Chronicle India's Fight for Independence

ভারতের শেষ ১০০ বছরের ইতিহাস এ সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ১০ টা  টানা' বছর বলতে হলে আমাদের ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৮ এর এই দশ বছর ধরতেই হবে।  ১৯৩৭ এ ভারতের প্রায় কোনো নেতাই ভাবতে পারেন নি আর মোটে ১০ বছরের মধ্যে ভারত স্বাধীন হবে। ব্রিটিশ সাম্রাজের অবস্থা ১৯৩৭ এ যে রকম রমরমা তাতে কোনো ব্রিটিশ মনেই এই আশংকা আসে নি।
এই দশ বছরের অমৃত বাজার পত্রিকা নিয়েই এই লেখা।  আমরা শুরু করি ১৯৩৯ থেকে। পরের দিকে যাবার আগে বলা দরকার সব কটা স্ক্যান ইমেজ ই ব্রিটিশ লাইব্রেরি এর প্রজেক্ট থেকে নেওয়া।  এ ছাড়াও গুগল নিউস আর্কাইভ এ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এর বেশ কিছু পুরনো স্ক্যান ইমেজ আছে।  তবে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এর অনেক দিনের কাগজ ই গুগল এর সাইট এ নেই।  তাই ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এর কাগজ নিয়ে বেশি আলোচনা করা মুশকিল।  তবে এটাও ঠিক অমৃত বাজার এর এই স্ক্যান কপি ও কিছু দিন আগেও ছিল না।  এখনো স্ক্যান এর মান বেশ খারাপ।  তাও অমৃত বাজার এর হেডলাইন দেখে আমরা সেই দিনের প্রধান খবর এর ধারণা করতে পারি। আশা করব যুগান্তর এর স্ক্যান কপি ইন্টারনেট এ পাব। আনন্দবাজার খুলে দেবে তাদের পুরনো দিনের কাগজের সম্ভার।

ফিরে আসি কাগজের কথাতে। অমৃত বাজার এর প্রথম পাতা এপ্রিল এর ১৩ এর কাগজ। পাতা ভর্তি ইউরোপ এর খবর।  ২য় বিশ্বযুদ্ধ এর শুরু র চাপ চাপ উত্তেজনা সেই দিনের প্রথম পাতায়।  তবে শুধু যুদ্ধ নয়, গান্ধীজির কথাও ছিল।

১৯৩৯ এর কাগজের প্রথম পাতার ওপরে লেখা থাকত "স্বরাজ আমাদের অধিকার" , আর "অহিংসা আমাদের ধর্ম"। ১৯৪০ এ সেই স্বরাজ আর অহিংসা এর কথা লেখা হত না কাগজের প্রথম পাতার হেডলাইন এর ধারে। অমৃত বাজার এর ১৯৩৯ এর দাম ছিল ৩ আনা, ১৯৪৮ এ দাম হলো ২ আনা।  বোঝাই যাচ্ছে বাঙালি এর অর্থনৈতিক ভাবে টিকে থাকার একটা লড়াই চলছিল সেই সময় থেকে। তবে অমৃত বাজার ১৯৩৯ সালে দৈনিক ছিল না, ১৯৪৮ সালের আগেই কাগজ প্রতিদিন বেরোত। ১৯৪৭ এর ১৫ ই অগাস্ট এর বিশেষ সংস্করণ এর দাম ৪ আনা। ২০১৫ সালের আজকের কাগজ দেখলেও আমরা সাধারণ মানুষ এর কথা তেমন পাই না।  সেই যুগের অমৃত বাজার ও ছিল প্রধানত শহরের কাগজ। কেনা খবর ই বেশি বেরোত। ১৯৩৯ - ১৯৪৮ এর এই দশ বছর বাঙালি সত্যিই এক বিশ্ব নাগরিক ছিল। যুদ্ধ সুদূর ইউরোপ থেকে ঘরের কাছে এসে পড়েছিল।  যুদ্ধ এর ফলে বাঙালি র ভাত কাপড়ের নিদারুণ টান পত্রিকা এর পাতাতে মাঝে মাঝে উঠে আসত।



১৯৩৯

১৯৩৯ এর শুরু তে যুদ্ধ এর কালো মেঘের ইংগিত অমৃত বাজার এর প্রথম পাতাতে। হিটলারের ভাইপো এর নাজি দের হাতে মার খাবার কথাও রয়েছে ! এই ভাইপো এর পরে, ১৯৫২ তে মৃত্যু দন্ড হবে ইহুদি নিধণ এর জন্য।
পুরনো কাগজের এই এক মজা ইতিহাস - বর্তমান - ভবিষৎ সব এক হয়ে যাওয়া। সেই দিনের আর এক ঘটনা যা কাগজে এলো - ইতালি এর হাতে আলবানিয়া এর হার।  এটাও ২য় বিশ্ব যুদ্ধ এর একদম শুরুর ঘটনা।
১৩ ই এপ্রিল ১৯৩৯ এর কাগজ টা যেন পুরো ১৯৩৯ সালের এর খবর-এর ই এক ছবি।  বছরের বাকি দিনের কাগজ না পরলেও চলে। তখন কার দিন গুলো এই রকম ই ছিল।

কাগজে আসত প্রধানত ইউরোপ এর লড়াই এর শুরু এর কথা - মাঝে মাঝে কিছু ভারতের কথা, এই বাংলার কথাও আসত। তবে দেশের কথা বেশির ভাগ ই ছিল খারাপ খবর। যেমন নর্থ বেঙ্গল এর এই ট্রেন দুর্ঘটনা এর কথা উঠে এলো সেই দিনের হেডলাইন এ।

যুদ্ধ এর দামামা বাজার সাথে সাথে অর্থনীতির আকাশ এ কালো মেঘ নেমে এলো।  সাফাই কর্মীদের ধর্মঘট কলকাতা সহর অচল করে রেখেছিল। সেই ধর্মঘট শেষ হবার কথা বেরোলো সেই ১৯৩৯ এর এপ্রিল এর কাগজে। মাসিক বেতন ৩০ টাকার নিচের কর্মীদের মাইনা ১ টাকা করে বাড়লো প্রতি ৩ মাসে।  মাসে ৩০ পায়সা বাড়া !!! যারা ভাবছেন ৩০ পায়সা ১৯৩৯ এর আজকের অনেক, তাদের জন্যই জানাই আজকের দিনের ২০ টাকার মত।  আজকের দিনে কোনো সরকারী ধর্মঘট ২০ টাকা মাইনা বাড়লে বন্ধ হবে কি ?






১৯৪০

আমাদের অনেক এর একটা ধারণা আছে যে ইংরাজ আমলে দেশের অর্থনীতি অনেক ভালো ছিল। এটা একটা বিপজ্জনক মিথ। ১৯৪০ এর জানুয়ারী এর প্রথম দিনের কাগজে জ্যোতিষী গ্রেট ব্রিটেন এর ১৯৪০ এর সারা বছরের পূর্বাভাস মিলিয়ে দিয়েছেন সাধারণ বুদ্ধি দিয়ে !! ১৯৪০ এ র এপ্রিল এর কাগজ এ বড় করে বেড়িয়েছিল কলকাতা কর্পোরেশন এর ময়লা কর্মীদের ধর্মঘট। মাসের মাইনা ছিল মোটে ৩০ টাকা। যারা বলবেন ৩০ টাকা তখনের দিনে অনেক টাকা - মানা মুশকিল।এদিকে বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। মাঝে মাঝেই অমৃত বাজার স্পেশাল afternoon এডিশন বার করছে।  এপ্রিল ৯, ১৯৪০ এর সেই রকম ই একটা দিনের কাগজ এর প্রথম পাতা। হিটলার এর জার্মানি নর্ডিক দখল শুরু করেছে।
ঘটনা এত তাড়াতাড়ি ঘটছে যে সপ্তাহে একদিন স্পেশাল এডিশন এ লোককের চাহিদা মিটছে না। আমি ১৯৪০ এর মে- জুন মাসের অনেক গুলো কাগজ ই এক সাথে দিয়েছি।  অকল্পনীয় দ্রুততার সাথে ঘটনা ঘটছে। জার্মানি এর গতি অপ্রতিরোধ্য। খুব তাড়াতাড়ি জার্মানি ফ্রান্স এর দরজাতে পৌছে গেল।  এত দিন বাদে যারা মনে রাখতে পারেন নি মাগিনট লাইন, তাদের জন্য - ১৯১৮ এর লড়াই এর পরে ফ্রান্স জার্মান -  ফ্রান্স বর্ডার এ এক ব্যাংকার সিস্টেম তৈরী করে। সেটাই মাগিনট লাইন যা ফ্রান্স এর ইন্সুরেন্স ছিল।  ম্যাগিনট লাইন এর পতন একটা বিরাট খবর কারণ এর পরে ফ্রান্স এর দখল নেওয়া সময় এর অপেক্ষা শুধু।
বছরের শেষ দিকে বেরোলো ভাওয়াল সাধু মামলার বহু  প্রতিক্ষিত রায়।  যুদ্ধ এর হেডলাইন একদিনের জন্য দখল করে নিল সেই খবর।



























১৯৪১

১৯৪০ এর কাগজ ছাড়িয়ে চলে এলাম ১৯৪১ এ।  এবার ইউরোপ নয়, আমাদের ঘরের খবর। রবীন্দ্রনাথ এর মৃত্যু এর দিনের বিকালের সেই স্পেশাল এডিশন। আজকে বোধ হয় ধারণা করতে পারব না কি আলোড়ন ফেলেছিল সেই দিনের খবর। পৃথিবীর কোথাও কি দেখা গেছে এক কবির জন্য এত লোক।  পরের দিনের অমৃত বাজার এর সব পাতাই তুলে ধরতে মন করছে। আমরা বিজ্ঞাপন গুলো নজর করব।  মাঝে মাঝে অমৃত বাজার এর বিজ্ঞাপন এর জায়গা খালি।  বোঝা যাচ্ছে অর্থনীতির বেহাল অবস্থা।  রবীন্দ্রনাথ যেদিন মারা গেলেন কাগজের উপরের ছোট বিজ্ঞাপন টা দেখুন - ক্যান্সার নিরাময় এর রেডিও থেরাপি এর বিজ্ঞাপন। কিছু কিছু জিনিস ৭০ বছর পরেও একই রকম সাম্প্রতিক।


মাওলানা আজাদ গ্রেফতার! দিল্লি থেকে কলকাতায় যাওয়ার পথে এলাহাবাদ স্টেশনে

কংগ্রেসের সভাপতি মাওলানা আজাদ আজ সকালেই এলাহাবাদ স্টেশনে গ্রেফতার হয়েছেন। তিনি দিল্লি থেকে কলকাতায় যাচ্ছিলেন। 13th ডিসেম্বর তাঁর দেওয়া একটা বক্তৃতার সাথে সম্পর্ক থাকতে পারে। এই ঘটনা দেশের রাজনৈতিক অবস্থাকে আরও জটিল করে তুলেছে।

এলাহাবাদ থেকে জারি করা ওয়ারেন্ট মারফত শহরের পুলিশ সুপারিন্টেনডেন্ট তাঁকে গ্রেফতার করেছেন। এখন তিনি Naini central jail-এ আছেন।

এই গ্রেফতার ভারতের বর্তমান দুর্দশার কথা মনে করিয়ে দেয়। একদিকে বিশ্বযুদ্ধের ঝামেলা, অন্যদিকে স্বাধীনতা সংগ্রামের জোর। এই অবস্থায় এই গ্রেফতার, আলাদা ঘটনা না আগামীতে কংগ্রেসের উপর আরও হামলার ইঙ্গিত, তা এখনই বলা কঠিন। তবে একটা কথা ঠিক, মাওলানা আজাদের গ্রেফতার সারা দেশ জুড়ে আলোচনা সৃষ্টি করবে, রাজনৈতিক পরিবেশে তোলপাড় ফেলবে এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ বাড়াবে।




In terms of news coverage intensity, Rabindranath Tagore's death stands out as a truly momentous event in Indian history. Unlike even the shocking assassination of Mahatma Gandhi in 1948, the news of Tagore's passing in 1941 dominated every single page of the Jugantar. This unprecedented dedication to a single story reflects the profound impact Tagore had on the nation and Bengali mindset, surpassing even the immense shock and grief Gandhi's death brought.







                            

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু, ভারতের সংবাদপত্রের ইতিহাসে এক অদৃষ্ট ঘটনা। ১৯৪১ সালে, যখন গোটা জগৎ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগুনে জ্বলছিল, তখন রবীন্দ্রনাথের বিদায় সংবাদ ঝড়ের ঢেউয়ের মতো সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। তার মৃত্যুর শোক এমন গভীর, এমন সর্বব্যাপী যে, 'যুগান্তর'-এর মতো জনপ্রিয় পত্রিকাও তার সব পৃষ্ঠা শুধুই তার কবিতা, গান, ছবি, লেখা দিয়ে ভরে দিয়েছিল।

মহাত্মা গান্ধীর ১৯৪৮ সালের হত্যার কথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু যে আঘাত দিয়েছিল, তা ছিল অন্য রকম। এটা ছিল মায়ের কোলে শুয়ে থাকা শিশুর মতো, হঠাৎ তার হাত ছুটে যাওয়া। এটা ছিল এক স্বপ্নের ভাঙন, এক যুগের সমাপ্তি।

তাঁর মৃত্যুর সংবাদ শুধুই খবর ছিল না, তা ছিল এক জাতির হাহাকার, এক সংস্কৃতির শোকগান। যুগান্তরের পাতায় পাতায় রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি, তার কবিতার সুর, তার গানের স্বর, তার ছবির ছায়া - এসব মিলেমিশে এক অমৃত স্মৃতিস্তম্ভ রচনা করেছিল।

রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু, ভারতের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় কাহিনী। এটা ছিল শুধুই একজন কবির মৃত্যু নয়, এটা ছিল এক জাতির আত্মার ক্ষতি। যুগান্তরের পৃষ্ঠাগুলো সাক্ষী, রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু কতটা গভীরভাবে, কতটা অসম্ভবভাবে স্পর্শ করেছিল ভারতের হৃদয়কে।












                            

১৯৪২
১৯৪২ এর প্রতি বোধ করি তেমন সুবিচার করলাম না। অনেক অনেক  যুদ্ধ এর খবর, গান্ধীজির খবর সেই বছরের হেডলাইন এ। বছর শেষ হচ্ছে কলকাতার উপরে জাপানি বম্বের আক্রমণ দিয়ে। ততদিনে  যুদ্ধ এর গতি পরিষ্কার। অক্ষ বাহিনী হারছে। সেই সময় পূর্ব মুখী মার্কিন সেনার সাপ্লাই লাইন এর শুরু ছিল কলকাতা।  শেষ চেস্টা করতে জাপানি রা কলকাতার সাপ্লাই লাইন এ বাধা দিতে কলকাতা আক্রমণ করলো।  যুদ্ধ এর গতি পরিবর্তন হলো না।  তবে
আমাদের অপদার্থ নেতা দের জন্য এর পরেই যে দুর্ভিক্ষ হলো তাতে সেই জাপানি আক্রমণ এর কিছু ভূমিকা আছে।
১৯৩৯ থেকে ১৯৪৮ এই ১০ বছর সত্যি একটা অন্য রকম দশক।  ৫০ এর দুর্ভিক্ষ এর কথা আজকে আমরা এখনো পুরো ভুলি নি, সেই যুগের কিছু অসাধারণ গল্প, নাটক এর জন্য। কিন্তু কৌতূহল হলো কি সেই যুগের কাগজে সেই কথা ছাপা হত। দুর্ভিক্ষ এর কলকাতার লাইফ ম্যাগাজিনে এর ছবি ইন্টারনেট দেখলেই পাবো। অমৃত বাজার এ আমি দুর্ভিক্ষ এর সেই ছবি দেখতে পাই নি।  তবে সেই সময় এর কথা কাগজ এ ছাপা হত। প্রথম পাতার বাইরে সম্পাদিকীয় তে ফুড পলিসি এর অনেক সমালোচনা বেরোত।  তার একটা পাতা নিচের কাগজ এ।

লড়াই এর খবর ছাপিয়ে সেদিনের নিদারুন খাদ্যাভাব এর কথা কাগজের প্রথম পাতাতে চলে আসত কোনো কোনো দিন। পাতার মাঝের কার্টুন টা, একটু দুঃখের। পত্রিকা সাধারণ লোকের কথা ভেবে যে পাতা কমিয়ে ১ আনা দাম চালিয়ে আসছিল সেই পর্যন্ত। সেই দিনটা ছিল ১ এপ্রিল ১৯৪৩। বাঙালি এর জীবনে তখন প্রায় সবই এপ্রিল ফুল এর দিন। সেই সময় দিনে অমৃত বাজার বাধ্য হলো দাম বাড়াতে।

১৯৪২ এর প্রথম দিনের কার্টুন এ রুজভেল্ট এর অসাধারণ কার্টুন যে খানে আমেরিকা ফ্রিডম ইনজেকশন দিচ্ছে বাকি দেশ কে।

বেশ কিছু দিন থেকেই রবিবার এর কাগজ এর একটা আলাদা গুরুত্ব।  আমি একটা  রবিবার এর কাগজ টা তুলে দিলাম। সেই দিনের কাগজ অন্য রবিবার এর থেকে খুব আলাদা না হলেও এর ভিতর এ যেন পরের ৫-১০ বছরের ইতিহাস এর লেখা দেখা যাচ্ছে। কাগজ এর ডান দিকে  দেখছি, আমেরিকা তে উঠছে ভারত এর স্বাধীনতা এর কথা। ভারত এর স্বাধীনতা এর পিছনে আমেরিকাতে ওঠা আলোড়ন এর একটা গুরুত্ব ছিল। যুদ্ধ পরবর্তী সময় এ ব্রিটিশ আধিপত্য প্রায় শেষ হয়ে গেল। যুদ্ধ দেখিয়ে দিল ইউরোপ বাকি পৃথিবী দখল করে রাখলেও আমেরিকা এর উপরে কি রকম নির্ভরশীল।  আমেরিকা শুধু সামরিক শক্তি না, অর্থনীতি, বিজ্ঞান সব দিক থেকে এগিয়ে গেছে। আমেরিকা তে ততদিন এর এই চিন্তা হতে শুরু হয়েছে যে  ব্রিটেন এর ঔপনিবেশিক মনোভাব স্থায়ী শান্তির প্রতিবন্ধক। আরো মনে রাখতে হবে, মার্কিন মিলিটারি ততদিনে ভারতের নানা শহরে এসে পড়েছে।  কলকাতার দুর্ভিক্ষ এর কথা ঘনঘন বেরোচ্ছে মার্কিন কাগজে।  তাই যুদ্ধ পরবর্তী সময় এ মার্কিন মনোভাব কে মর্যাদা দিতে ব্রিটেন বাধ্য ছিল। সেই দিনের কাগজ এ দেখা যাচ্ছে সেই যুদ্ধ পরবর্তী সময় এর ইঙ্গিত।
মার্কিন ট্যাংক - ইউরোপ এর ট্যাংক এর তুলনা বেরিয়েছে কাগজের অন্য দিকে।













১৯৪৩

১৯৪৩ এর শুরু এর দিক থেকে জার্মানি এর যুদ্ধ এ পিছিয়ে যাওয়া একদম পরিষ্কার হতে শুরু হয়ে যায়। সেই রবিবার এর সকালের কাগজ এ বেরিয়েছে কুবান এর লড়াই এর কথা।  অসাধারণ সুন্দর কুবান মাউন্টেন অঞ্চল থেকে জার্মান দের পিছিয়ে যাওয়া শুরু হয়েছে।
তবে কাগজ এ যুদ্ধ ছাড়াও কিছু সাধারন এন্টারটেইনমেন্ট ও ছিল।  শেষের পাতা তে বেরোত ছোট গল্প, ব্রিজ ট্রিক। তবে সেই গল্প সাহেবী গল্প ই ছিল।









১৯৪৪

১৯৪৪, লড়াই এর শেষ দেখা যাচ্ছে। পর পর ঘটছে ঘটনা।  একটা করে মাস যাচ্ছে মিত্র বাহিনী জার্মানি কে ঘিরে ফেলছে।  এক দিনের কাগজে বেরোচ্ছে সোভিএট বাহিনীর এগিয়ে যাবার গল্প, তো পরের মাসেই ঘটছে মিত্র বাহিনীর ফ্রান্স এর নর্মান্ডি বিচ দখলের কাহিনী। সেই সঙ্গে বেরোচ্ছে গান্ধী - নেহেরু এর না না ভাষণের কথা।  এত দিনে যে আমরা স্বাধীনতা দেখতে পাচ্ছি।



১৯৪৫

১৯৪৫,  প্রথমেই যাই এপ্রিল মাসে।  তাসের ঘর ও বোধ হয় এর থেকে বেশি মজবুত।  গায়ে কাটা দেবার দ্রুততাতে প্রথমে মুসোলিনি, পরে হিটলার এর মৃত্যু।  তখনোর পূর্ব দিকে র লড়াই শেষ হয় নি।  অগাস্ট মাসের অমৃত বাজার এর হেডলাইন এ এলো হিরোশিমা এর এটম বোম্ব।
যত দিন যায় নতুন বম্ব এর কথা ততই বেশি জানা গেল। ততদিনে ইউরোপ এর লড়াই শেষ।  তাই কাগজের একদিকে জাপান ফ্রন্ট এর শেষ দিকের খবর আর কাগজের অন্য দিকের খবর হলো পতস দাম এর বৈঠক।
মাঝে মাঝে ভাবি কোথায় গেল আজাদ হিন্দ ফৌজ এর বিবরণ।  হয়ত ব্রিটিশ সেন্সরশিপ এর জন্য তাদের খবর বেশি ছাপা হত না।  যদি তাই হয় তাহলে সত্যি কি সাধারণ মানুষ জানত আজাদ হিন্দ ফৌজ এর কথা ? মনে রাখতে হবে অমৃত বাজার কিন্তু ঠিক সাধারণ মানুষের কাগজ ছিল না।  সাধারণ মানুষের ইতিহাস জানা চিরকালই মুশকিল।  হয়ত একদিন ইন্টারনেট আমাদের সাধারণ মানুষের ইতিহাস লিখতে অনুপ্রানিত করবে।
১৯৪৫ এর শেষ দিকে শুরু হয়েছিল আজাদ হিন্দ ফৌজ এর লাল কেল্লা এর বিচার।  সেই বিচার যে আলোড়ন ফেলেছিল তা বেশ বোঝা যায় সেই ডিসেম্বর এর অমৃত বাজার এর প্রথম পাতার দিকে তাকালে।  অমৃত বাজার ফান্ড রাইজিং শুরু করেছিল।  কাগজের ফান্ড ২৫০০০ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল।









1945 August - ইস্ট বেঙ্গল দল দ্বিতীয়বার আইএফএ শীল্ড জিতল

কলকাতা ফুটবলের ইতিহাসে এক অনন্য অধ্যায় রচিত হলো গতকাল। ইস্ট বেঙ্গল দল ফাইনালে মোহনবাগ্নান দলকে এক গোলে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো আইএফএ শীল্ড জিতলো।


ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে, কিছু কিংবদন্তি নাম আছে যারা কখনও ভোলা যাবে না। এমনই একজন ফ্রেড প্যাগস্লি, ইস্ট বেঙ্গলের ইতিহাসের এক উজ্জ্বল অধ্যায়।

একজন অ্যাংলো-বার্মিজ ফুটবলার, প্যাগস্লি ১৯৪৪-৪৫ সালে ইস্ট বেঙ্গলের হয়ে খেলেছিলেন। তিনি ভারতীয় ফুটবল ক্লাবের প্রথম বিদেশী খেলোয়াড় হিসেবেও বিবেচিত হন। তার দক্ষতা এবং দলের সাফল্যে অবদানের জন্য তিনি অপার জনপ্রিয়তা এবং সম্মান অর্জন করেছিলেন।

তবে, প্যাগস্লির জীবনের পথ সহজ ছিল না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বার্মায় (বর্তমান মায়ানমার) রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তিনি কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে ভারতে আসেন। ঘন জঙ্গল ও নদী পার করে তাঁর এই ভ্রমণ ছিল অবিশ্বাসনীয়।

ইস্ট বেঙ্গলে যোগদানের পর, প্যাগস্লি মাঠে তার অসাধারণ প্রতিভা দর্শক এবং সহকর্মীদের মন জয় করে নেন। তাঁর উজ্জ্বল খেলা ইস্ট বেঙ্গলের অনেক সাফল্যের পিছনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

যদিও প্যাগস্লির সম্পর্কে তথ্য সীমিত, তবু ইস্ট বেঙ্গলে তাঁর প্রভাব অবিস্মরণীয়।

























১৯৪৬

১৯৪৬ কাগজ এর প্রথম পাতাতে উঠে এলো স্বাধীনতার প্রস্তুতি।  ১৯৪৬ এর প্রতি তা মাস ভারতের ইতিহাস এর অসাধারণ এক একটা চ্যাপ্টার। না, গর্ব করার মত সব কিছু যে তা নয়. যেমন অগাস্ট এর দাঙ্গার কথা।  কলকাতার সেই দাঙ্গা ভারত ভাগের প্রায় শেষ ছবি।  মুসলিম লীগ তার পরে নোয়াখালীর দাঙ্গা করে নিশ্চিত করে নিল দেশ ভাগ।অমৃত বাজার সেই দিনে ছিল বেশ নিরপেক্ষ।










১৯৪৭

১৯৪৭ এর ১৪ ই অগাস্ট এর কাগজ এ দেখছি স্বাধীনতার প্রস্তুতি। ১৪ই অগাস্ট।  এত দিনের লড়াই শেষ।  স্বাধীনতা আসতে আর মোটে এক দিন বাকি। কিন্তু সেই দিনের কাগজ দেখলে বেশি ভরসা হয় না।  মুসলিম রা রাজি হচ্ছে স্বাধীনতা দিবস এ !!! কাগজের অন্য দিকে বেলেঘাটা এর গান্ধী আশ্রম (আজকের নাম) এ গান্ধীর ওপরে হিন্দু যুবক দের হামলার কথা।  কেমন যেন আগাম ইঙ্গিত পাবো ১৯৪৮ এর ৩০ জানুয়ারী এর কালো দিনের !

সেই দিনের কাগজ এ দেখছি ১৯৪৭ এর ১৫ অগাস্ট এর অমৃত বাজার কালার প্রিন্ট এর কথা। আহা সেই দিনের কাগজের রঙিন প্রিন্ট আমরা দেখতে পেলাম না।  স্ক্যান কপি সাদা কালো তে। সেই দিনের আনন্দ বাজার এর রঙিন প্রিন্ট ইন্টারনেট এ রয়েছে।















১৯৪৮












No comments:

Post a Comment