কোটি কোটি মানুষ এর ভাগ্য নির্ধারণ হয়েছিল এই তিন তে বছরে। টাইম ট্রাভেল এর উপায় যখন নেই তখন আমাদের নির্ভর করতেই হবে ওই সময় এর কাগজ এর ওপরে।
সে দিনের এক একটা দিন এর ঘটনা আজও আমাদের জীবন নির্ধারণ করছে। অবিশ্বাষ্য দ্রুততায় ঘটে চলে ঘটনাস্রোত।
১৯৪৬
শুরু টা করা যাক স্বাধীনতার ঠিক এক বছর আগে থেকে। ১৯৪৬ এর ১৫ই অগাস্ট।

সেই দিনের শেষেই জিন্নাহ ডাক দিলেন ডাইরেক্ট অ্যাকশন এর। পরের দিন টা ভারত এর গত ১০০০ বছরের ইতিহাস এর হয়তো সব থেকে লজ্জার দিন।
১৭ই অগাস্ট এর কাগজ খুললে দেখতে পাই প্রথমেই বেরিয়েছে জিন্নাহ আর নেহেরু এর আলোচনা ভেস্তে যাবার কথা। কাগজ এর অন্য দিকে কলকাতার দাঙ্গার কথা।
কাগজ এর তোলার দিকে রয়েছে নেহেরু এর বক্তব্য। নেহেরু কিন্তু সেই দিন কলকাতা যান নি। নেহেরু এর ক্ষমতা দখল এর মোহ সেই দিন জিন্নাহ এর থেকে কম কিছু ছিল না। নেহেরুর রাজনৈতিক স্থবিরতা এর আগেও আর এর পরেও স্বাধীন ভারত দেখেছে। তবে ১৭ ই অগাস্ট ১৯৪৬ এর কাগজ বোধ হয় ভদ্রলোকের বাচন সর্বশ্যটা সব থেকে ভালো তুলে ধরেছে।
"Midnight furies" নামের বিখ্যাত বইয়ে N. Hajari লিখেছেন সেই দিনটা নিয়ে।
সেই দিনের আরো কিছু বর্ণনা দেবো। নিচের অংশটা তখনকার পুলিশ রিপোর্ট থেকে নেয়াও (

৫ ডিসেম্বর
সেই দিনের ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এর হেডলাইন - "Talks Begin in London Viceroy reports to Premier and Cabinet Mission" . আমাদের দূর্ভাগ্য যে আমরা ভবিষ্যৎ দেখতে পাই না। পেলে দেখতাম সেই বৈঠক কি ভাবে আমাদের দেশ এর ভাগ্য গড়ে দেবে। মুসলিম লীগ এর জিন্নাহ, কংগ্রেস এর নেহেরু, বল্লভ ভাই পাটেল সেই দিনের বৈঠক এ মুখোমুখি। সেই বৈঠক ভবিষ্যৎ ভারত, পাকিস্তান বিভাজন এর পথ তৈরী করে দেবে। ১৯৪৬ এর সেই দিনের কাগজ বলছে "The full conference, it is thought, can not last more than two days as Friday evening or Saturday morning is about the latest that the Congress leader's departure can be delayed if they are to reach Delhi with a slight breathing space before the start of the Constituent Assembly on Monday." ভেবে অবাক ই লাগে যে এত গুরুত্ব পূর্ণ আলোচনা যেখানে দরাদরি ই সব সেই খানে তাড়াহুড়ো কি সত্যি দরকার ছিল ? সেই ভাবনা তা যে নিতান্ত অসার না সেটা বোঝা যাবে আর কিছু দিন পরেই।
পরের ৬ মাস হলো সেই কংগ্রেস এর ডিগবাজি এর ইতিহাস। এর পরে গান্ধীজি নিজেই নেমে পড়লেন - কোনো রকম আকার ইঙ্গিত না, সোজা সাপটা বললেন ওটা মানতেই হবে, জহর কথা দিয়ে এসেছে। সেই গুলোহইতো ভুলে যাওয়া ইতিহাস , তবে গোপন ইতিহাস না। পরের ৩-৪ মাসের প্রতিদিনের কাগজ এর হেডলাইন সেই ইতিহাস বহন করে।
১৯৪৭
এই দেখতে দেখতে ১৯৪৭ চলে এলো। পলাশীর ১৯০ বছর পরে, বহু লোককের বহু ত্যাগ, বহু জল্পনা কল্পনার পরে এসে গেল সেই ১৯৪৭।
জানুয়ারী এর পাতা উল্টাতে থাকি।
১ জানুয়ারী - No More Imperial Honours and Titles for Indians
২ জানুয়ারী - Mahatma's Historic Walking Tour Begins Today
৩ জানুয়ারী -Mahatma Launches great experiment in Non-violence
৪ জানুয়ারী - Science must come to service of Hungry Millions - Nehru
৫ জানুয়ারী - Momentous A.I.C.C session opens today
৬ জানুয়ারী - Congress cabinet commend acceptance of December 6 statement
৭ জানুয়ারী - A.I.C.C accepts December 6 statement
৮ জানুয়ারী - Assam to act alone in future contingencies
৯ জানুয়ারী - Mahatma's march in Quest of communal peace
১০ জানুয়ারী - Assam to abide by Delhi decision of Congress
১১ জানুয়ারী - Suharwardy votes 'No Confidence' in Congress
১২ জানুয়ারী - Cawnpore firing figures in U.P assembly
১৩ জানুয়ারী - Need for reorientation of congress policy - Moulana Azad
১৪ জানুয়ারী - New turn in Cawnpore Labor Crisis - about lakh workers thrown out of employment
১৫ জানুয়ারী - Strikes and lockouts made illegal
১৬ জানুয়ারী - Countrywide searches of communist party offices
State of "rebellion" in central plains of Burma
১৭ জানুয়ারী - Suharwardy's unwanted presence at police H.Q
১৮ জানুয়ারী - Sikh threat to withdraw from constituent assembly
১৯ জানুয়ারী - Situation Fast Deteriorating Cawnpore strike
২০ জানুয়ারী - Stalin sees no possibility of Third world war
২৩ জানুয়ারী - India decides to be republic
Netaji's picture at Cellular Jail, Port Blair
Police open fire again on crowds in Calcutta
২৪ জানুয়ারী - Cawnpore strike called off
২৫ জানুয়ারী - Private communal armies are dangerous for peace
২৬ জানুয়ারী -India's Independence Pledge
Mahatma's glowing tributes to Subhas Chandra Bose
২৭ জানুয়ারী -Provinces right to opt out after first elections
Muslim League urged to join constituent assembly
২৮ জানুয়ারী - Five hundred arrests in Punjab - League definace of Govt. Ban continues
২৯ জানুয়ারী - Punjab ban on R.S.S.S and Muslim National Guards Lifted
৩০ জানুয়ারী - States ready to enter Indian Union

জানুয়ারী এর প্রথম সপ্তাহতে বার বার এসেছে AICC এর অধিবেশন এর কথা। এই লেখার শুরু করেছিলাম ৫ই ডিসেম্বর থেকে - কারণ ভারতের এই ক্রান্তি মুহুর্তে একটা সিম্বলিক দিন দেখতে গেলে বোধ হই ৬ই ডিসেম্বর ১৯৪৬ এর অধিবেশন এর দিন টাই নিতে হবে :
১. সেই দিনের আলোচনা বার বার ফিরে এসেছে পরের ৬ মাস ধরে
২. দেশ ভাগের সেটাই সূচনা
৩. খুব অল্প কিছু লোককের প্রায় ৫০ কোটি মানুস এর ভাগ্য নির্ধারণ করার এমন নিদর্শন পৃথিবীর ইতিহাসেও দুর্লভ
আগেই বলেছি আসাম এর কথা। ১৯৪৭ এর জানুয়ারী এর প্রথম দিকের কাগজের হেডলাইনস বহণ করে চলেছে সেই দিনের গৌতম বরদুলাই এর সংগ্রাম এর কথা (৮ জানুয়ারী - Assam to act alone in future contingencies)
১৯৪৭ এর শেষ ৩ তে মাস
স্বাধীনতার দিন কেটে যাবার পরেই সব খবর শেষ হয়ে গেলো এমন তো নয়। অগাস্ট পেরিয়ে অক্টোবর এ এসে গেলাম। পুরো অক্টোবর এর প্রতিটা দিন থর থর উত্তেজনাতে কাঁপছে। একদিকে দাঙ্গা, শরণার্থী তো অন্য দিকে কাশ্মীর, হায়দরাবাদ।
২৩ অক্টোবরের এর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এর কার্টুন অসাধারণ ভাবে সেই পুরো মাস টাকে একটি ছবিতেই ধরেছে
সেই সময় টা ছিল স্বাধীন ভারত আর স্বাধীন পাকিস্তানের টানাপড়েন এর সময়। মনে রাখতে হবে দেশ স্বাধীন হলেও দেশীয় রাজ্য গুলো তখনও ভারত বা পাকিস্তানের ভিতরে ঢোকে নি। প্রতি দিনের কাগজ এর থরো থরো উত্তেজনা এই রাজ্য গুলোর কি ভবিষ্যৎ হবে সেই নিয়ে।
তার মধ্যে একটা ঘটনা আজকের দিনেও ৭০ বছর পরেও সমাধান হয় নি - কাশ্মীর। কাশ্মীর এর সমস্যা এর শুরু দেখতে গেলে ১৯৪৭ এর অক্টোবর এর থেকে গুরুত্বপূর্ণ মাস আর কিছু নেই।
প্রায় সব কিছুর শুরু ওই মাস থেকে। প্রথমের বলে রাখি ১৯৪৭ এর স্বাধীনতার পরেও কাশ্মীর আলাদা ই থাকে ভারত আর পাকিস্তান এর বাইরে দুজনের প্রতিবেশী স্বাধীন রাজ্য হিসাবে। কাশ্মীর রাজা ১৯৪৭ এর অগাস্ট এ চুক্তি করেছিলেন ভারত আর পাকিস্তান এর সাথে যে কাশ্মীর নিরপেক্ষ থাকবে। কিন্তু দু মাস এ সব কিছু পাল্টে গেলো। ১৯৪৭ এর অগাস্ট এর পরে যখন সারা পাকিস্তান জুড়ে জোরদার হিন্দু বিরোধী হাওয়া কাশ্মীর এ আসতেই অশান্তি শুরু হলো। করে ১৯৪৭ এর ২০ই অক্টোবর - ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এর প্রথম পাতা।
কাগজ এর পাতাতে আরো বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। কাশ্মীর অভিযোগ জানাচ্ছে যে পাকিস্তান রেডিও থেকে ঘন ঘন কাশ্মীর বিরোধী প্রচার চলছে, কাশ্মীর এর মাল সাপ্লাই ও পাকিস্তান আটকে দিচ্ছে, প্রচুর লোককের হাতে পাকিস্তান অস্ত্রও তুলে দিচ্ছে। কাশ্মীর এর ব্যাঙ্ক এর ফিক্সড ডিপোজিট পাকিস্তান ভাঙ্গাতে দিচ্ছে না। সেই দিন কাশ্মীর সরকার বিবৃতি দিলো যে এমন টা চলতেই থাকলে কাশ্মীর ভারত এর থেকে সাহায্য নিতে বাধ্য হবে।
২৬শে অক্টোবর এর কাগজ এর প্রথম পাতাতে বিশাল হেডলাইন দলে দলে আফ্রিদি রা ট্রাক এ অস্ত্র নিয়ে কাশ্মীর এ ঢুকছে। এরা আসলে কাশ্মীর এর গ্রাম এর নানা উপজাতি। ১৯৪৭ এ কাশ্মীর এর এই গ্রাম গুলোর সত্যি কি অবস্থা সেটা এই কাগজ গুলোতে নেই। ধরে নিতে দোষ নেই অবস্থা খুবই খারাপ - খাবার নেই, টাকা নেই। সেই দিনের কাগজ এ পাকিস্তান থেকে জিন্নাহ এর বিবৃতি ও বেরোলো, ২০ তারিখ এর কাশ্মীর সরকার এর বিবৃতিকে খণ্ডন করে। আমি পড়ে দেখলাম যে পাকিস্তান কাশ্মীর এর বিবৃতি কে ঠিক অসত্য বলে নি - তবে সমস্যার জন্য নিজেদের দোষ স্বীকার ও করে নি। যেমন পাকিস্তান এর বক্তব্য অনুসারে লাহোর এর ব্যাঙ্ক তখন ও ভারত সরকার এর অধীন এ, তাই ব্যাঙ্ক যদি টাকা দিতে অস্বীকার করে তার দায় পরে ভারত সরকার এর ওপর। এই কথা টা সত্যি যে ১৯৪৭ এ ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ভারত আর পাকিস্তান দুটোরই সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক হিসাবে কাজ করতো ১৯৪৮ এর ডিসেম্বর এ ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এর মোট গোল্ড রিজার্ভ ভারত আর পাকিস্তান এর ভিতর ৭০:৩০ ভাগে ভাগ করে দেওয়া হয়।
আবার পরের দিনের কাগজ (২৭ এ অক্টোবর) এ দেখছি আফ্রিদি রা কাশ্মীর শহর এর ৩০ কিলোমিটার এর ভিতর চলে এসেছে। ২৮ অক্টোবর ঐতিহাসিক হেডলাইন।
সেই দিন থেকে কাশ্মীর ভারতের অংশ হলো আর ৭০ বছরের বিবাদের ইতিহাসও শুরু হলো। আজকের দিনে মনে হতে পারে সেই সময় মাসের পর মাস কাশ্মীর কাগজ এর প্রথম হেডলাইন ছিল - ভুল !! ৭ই অক্টোবর এর বিশাল হেডলাইন ছিল হায়দরাবাদ নিয়ে।
দেখতে দেখতে এসে গেলো ডিসেম্বর এর শেষ দিন। ৩১ এ ডিসেম্বর এর অমৃত বাজার পত্রিকা এর হেডলাইন এ দেখছি সেই কাশ্মীর ফিরে এসেছে।
ভারতের সেই সিকিউরিটি কাউন্সিল এর যাত্রা টা খুব সুখের হয় নি। সেই সব হেডলাইন অন্য বছরের